নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

ঈদযাত্রায় সড়কে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়, পরিবহন না পেয়ে যাত্রীদের হয়রানি।

 আমারদেশ২৪ ডেস্কঃ
শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

পরিবারের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। শুক্রবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল উপচেপড়া ভিড়।

ঈদযাত্রায় সড়কে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়, পরিবহন না পেয়ে যাত্রীদের হয়রান, লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও রেলস্টেশনে টিকেটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট নামের সোনার হরিণ পাওয়ার গল্প সবারই জানা। বিগত কয়েক বছর এমনই ছিল দেশের ঈদযাত্রার চিত্র। ‘ঈদ মানে আনন্দ’ আর ‘ঈদ মানে খুশি’ সেই সেøাগান বদলে হয়েছিল ‘ঈদ মানে হয়রানি’ ‘ঈদ মানে ভোগান্তি’।

তবে এবারে ঈদযাত্রায় বদলে গেছে আগের সব চিত্র। বাস কাউন্টারগুলোতে নেই যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। রেলস্টেশনেও নেই শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা। নেই অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে লঞ্চ ছাড়ার প্রবণতা। আর এসব কিছুই হয়েছে সরকারি লম্বা ছুটির কারণে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের লম্বা ছুটি থাকায় এবার অনেকেই আগে-ভাগে বাড়ি ফিরেছেন। আর যারা আছেন তারাও অগ্রিম টিকেট কেটে রেখেছেন বা যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তাই টার্মিনালগুলোতে আগের মতো সারা দিন যাত্রীদের আনাগোনা নেই।

শুক্রবার দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা। কোনো কোনো কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. শিপন বলেন, এবার লম্বা ছুটি থাকায় অনেকেই আগে চলে গেছেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে যাত্রীদের ভিড় নেই। এ ছাড়া এখন যারা আসছেন তারা আগে থেকে টিকেট কেটে রেখেছিলেন। এখন টার্মিনালে সবসময় যাত্রী থাকে না।

অনলাইনে টিকেট ছাড়ার পর অনেকেই সেখান থেকে টিকেট বুকিং দিয়েছেন। এখন তারা সকাল অথবা সন্ধ্যার পরে একটা নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে এসে উপস্থিত হন। এ কারণে কাউন্টারে যাত্রীদের চাপ কম। তা ছাড়া কেউ কাউন্টারে এলেও এ মুহূর্তে টিকেট পাবেন না। সব টিকেট আগেই বুকিং হয়ে গেছে।

তার কথার সত্যতাও পাওয়া গেল। গাবতলী ঈগল পরিবহনের কাউন্টারের পেছনে বসে আছেন ফারজানা ও আলেয়া নামে দুই নারী। তারা বরিশালের টরকি যাবেন।
টিকেট পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, গাবতলীর কোনো গাড়িতে বরিশালের টিকেট নেই। আমরা সাভারের বলিয়ারপুর থাকি। তাই গাবতলী হয়েই বাড়ি যাই। কিন্তু এবার এসে কোনো টিকেট পাইনি। সব টিকেট নাকি আগেই বুকিং হয়ে গেছে।

এখন কীভাবে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসা থেকে যেহেতু বের হয়েছি আর ফিরে যাব না। এখন সিএনজি নিয়ে গুলিস্তান যাব। সেখান থেকে বরিশালের কোনো না কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে। অন্যদিকে গাড়ি না পেয়ে অনেকেই যাচ্ছেন পথ ভেঙে ভেঙে। টার্মিনালের সামনের সড়কে সেলফি পরিবহনে পাটুরিয়ার যাত্রী তুলতে দেখা যায়। গাবতলী থেকে পাটুরিয়ার ভাড়া ২০০ টাকা। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে অনেকেই নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইব্রাহিম সময়ের আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় কোথাও তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি। সকালে কল্যাণপুরে দুটি গাড়িতে ৪০০ টাকার ভাড়া ৫০০ করে নিচ্ছিল শুনে সেখানে আমরা গিয়ে গাড়ি দুটোকে ৪ হাজার টাকা করে জরিমানা করি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক আছে।

নৌপথ : রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। অন্য দিনগুলোর তুলনায় শুক্রবার লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। এদিন লঞ্চগুলোও ছেড়েছে যথাসময়ে। মূলত শুক্রবার থেকে সব বেসরকারি অফিসসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এ ভিড় বেড়েছে।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনের শুরুতেই পন্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়িফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া ও পটুয়াখালীগামী পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা যায়। বরাবরের মতো এদিন দুপুরে যাত্রীদের ভিড় সকালের তুলনায় কম থাকলেও অন্য দিনগুলোর তুলনায় দুপুরে ভিড় একেবারে কম ছিল না। বিকালে আবার যাত্রীর ভিড় বেড়ে জনসমুদ্র তৈরি হয়। এদিন সবথেকে বেশি ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতেও যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালে বরিশালগামী লঞ্চগুলোতেও যথেষ্ট ভিড় ছিল।

এদিন বরিশালগামী লঞ্চ সুন্দরবন-১০ এ ভালোই ভিড় লক্ষ করা যায়। লঞ্চটির স্টাফ নাসিম বলেন, আগে ঈদের সময় সদরঘাট থেকে বরিশালগামী প্রতিটি লঞ্চের একটি অগ্রিম টিকেট পাওয়ার জন্য যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকত। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কেবিনের টিকেট না পেয়ে অনেকের মুখ মলিন হতো। একপ্রকার নিরুপায় হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডেকে বসে যেতেন অনেকে। কেউ কেউ ডেকে জায়গা না পেয়ে লঞ্চের ছাদে উঠতেন। আবার কেউ নিজ থেকেই টিকেটের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে চাইতেন। কিন্তু সে চিত্র এখন আর নেই। এখন টিকেটের কোনো বাড়তি চাপ নেই। ঘাটে এলেই টিকেট পাওয়া যায়। এখন খুব বেশি প্রয়োজন হলে যাত্রীরা ফোনে যোগাযোগ করেন।

সদরঘাটে আসতে ও টিকেট পেতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সামাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, সদরঘাটে এসেছি জ্যাম ঠেলে। এ ছাড়া আর কোনো ভোগান্তি নেই। কেবিন পেতে সমস্যা হয়নি। অভিযান-৫ লঞ্চের একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছি।

ভোলাগামী আর্মি সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, সদরঘাটের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। ঈদে পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে বাসায় যাচ্ছি। আমি সিলেট ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদস্য হিসেবে কর্মরত।

অন্যদিকে অলস সময় পার করা শেষে এবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নৌ-শ্রমিকরা। তড়িঘড়ি করে মালামাল ওঠানামা করতে দেখা যায় তাদের। মনির হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে লঞ্চে কাজ করছি। আমার ভাইও এখানে ছিল কিন্তু করোনার পর বাড়ি চলে গেছে। এখন কাজ একেবারেই কম।

তিনি বলেন, আগে ঈদ মৌসুমে বেতনের বাইরে সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্নভাবে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারতাম। সাধারণ সময়েও আয় খারাপ হতো না। কিন্তু এখন ঘাটে তেমন যাত্রীই হয় না। লঞ্চও কমে গেছে। বেতনে পোষাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ঈদের সময় হওয়ায় এখন একটু ভিড় দেখা যাচ্ছে। তাই চাপ সামলাতে ঘাটে কিছু সিজনাল লোক আনা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জোনের আনসার সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছেন। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড়ের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মোবারক হোসেন বলেন, ঘাটে ভালোই ভিড় আছে। বিশেষ লঞ্চও চলছে।

আরও পড়ুন