ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমেছে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর প্রথম দিন ২৪ মার্চ থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার দিন ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনের দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৪ সালের রোজার ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং আহত কমেছে ৪০ দশমিক ৪১ শতাংশ। আগের বছরের ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জনের প্রাণহানি হয়েছিল এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছিলেন। এবারে ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় এবং ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত ধাপে ধাপে ও ‘স্বস্তিদায়ক’ হওয়ার কারণে সড়কে হতাহতের সংখ্যা কমে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বরাবরের মত এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত ও ১৫৫ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২.৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৬.৮৯ শতাংশ এবং আহতের প্রায় ১৮.৭৬ শতাংশ। ঈদের সড়কে এবার মোটরসাইকেল চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। বিপুল সংখ্যক মানুষ এবার মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে বাড়ি গেছেন। সড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ৭০ জন চালক, ৪৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ জন পথচারী, ৬০ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৬ জন শিক্ষক, ৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, এক জন সাংবাদিকের পরিচয় মিলেছে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যাত্রীসাধারণ অসংগঠিত ও সচেতন না হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণও চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এগুলো হলো সড়ক মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকায় নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েন। এছাড়া মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং ১ জন চালকের দীর্ঘসময় ধরে যান চালানো।

মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা, সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা। মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা এবং মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া এবং ঈদের ছুটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।