রবিবার ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে সংবিধানে পরিবর্তন এনে বর্তমান এককক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা, সংসদের মেয়াদ এক বছর কমিয়ে চার বছর করা ও আসন বাড়িয়ে ৪০০ করা, প্রধানমন্ত্রী পদে ২ বারের বেশি না থাকা, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করা এবং প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে দলীয়প্রধান ও সংসদ নেতা হিসেবে থাকতে না পারার প্রস্তাব নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া বেশিরভাগ সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচিত সংসদের প্রয়োজন হবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এটা করতে হবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে। আর রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এগুলো বাস্তবায়নও সম্ভব হবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ আসনের সমর্থন প্রয়োজন হবে। সুতরাং, নির্বাচন ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিংবা আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। তবে দুদক ও পুলিশ সংস্কারসহ অন্য কমিশনগুলোর অনেক সুপারিশই সরকার চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
প্রথম ধাপে জমা পড়া প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে দেওয়া প্রস্তাবগুলো সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মোট ৫ টি মূলনীতির পাশাপাশি বাংলায় দেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ থেকে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার মত সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করার সুপারিশ রেখেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সংস্কারের চেয়ে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন সংবিধান, সংসদ ও নির্বাচনি ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমূল পাল্টে দেওয়া এসব সংস্কার প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুপারিশগুলো সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে কিংবা তাদের মধ্যে যদি ন্যূনতম ঐকমত্য না হয়, তা হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সুপারিশই শেষ পর্যন্ত ‘কাগজেই থেকে যেতে পারে।’ ১৯৯১ সালের অস্থায়ী সরকারের সময়ের সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছিল।