নিউজ ডেস্ক:
শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫
বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফু-ওয়াং ফুডসের উৎপাদন প্রায় বন্ধ। নিয়ম থাকলেও, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দেয়া হয়নি কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। বেতন না দেওয়ায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ।
পরিবেশকদের টাকা লোপাট ও সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ না করার মাধ্যমে দায়-দেনা বাড়িয়ে এখন প্রায় বন্ধের পথে কোম্পানিটি।কেক, বিস্কুট, বানসহ ফু-ওয়াং ফুডসের রয়েছে জনপ্রিয় প্রায় ৫৬টি খাদ্য পণ্য। বাজারে বেশ চাহিদাও রয়েছে এসব পণ্যের।
কোম্পানিটি কোনো কারণ ছাড়াই গত ৯ ফেব্রুয়ারি এক অফিস আদেশে উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয়। ২৮ মার্চ পর্যন্ত দুই শিফটে উৎপাদন চালুর কথা থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ সময় তা বন্ধ থাকে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ডিএসইকে জানানো হয়নি উৎপাদন বন্ধের কারণও। যা তালিকাভুক্তি আইনের পরিপন্থী। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
বেতন বন্ধ রাখা, দক্ষ লোকবল ছাঁটাই করে কারখানা স্থায়ী বন্ধ করার পাঁয়তারা বুঝতে পেরে মার্চে দুই দফা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন শ্রমিক, কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফু-ওয়াং ফুডস এর কারখানার শ্রমিক বলেন, ‘লভ্যাংশের টাকা পাই না। আমাদের প্রোভিডেন্ড ফান্ডের টাকা পাই না। যে টাকা জমাই সে টাকারও খবর নাই। সব আত্মসাত করে বসে রয়ছে মালিক।’
২০২৩ সালে কোম্পানির ডিলারদের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির ২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। যা কোম্পানির মূল ক্যাশ বইয়ে না দেখিয়ে কোম্পানির হিসাব বিভাগে হাতে লেখা রেজিষ্ট্রার এ লিপিবদ্ধ করা হয়। পরিবেশকদের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ক্যাশে দেয়ার নির্দেশ দেয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। সে বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ শে আগষ্ট পর্যন্ত ১৫ দফায় মোট এক কোটি ছিয়ানব্বই লক্ষ সতের হাজার সাতশত চুয়াত্তর টাকা কোম্পানি থেকে তুলে নেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন।
এসব বিষয়ে জানতে ফু ওয়াং টাওয়ারে গেলে সেখানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।পরিবেশক, ডিলারসহ অন্যান্য পাওনাদারদের ভয়ে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তারা। মিয়া মামুনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জানানো হয়, তিনি অফিসে অনুপস্থিত। কথা বলেন হোয়াটসঅ্যাপে। তার দাবি, নগদ লেনদেনে তেমন ক্ষতি হয় না কোম্পানির। উৎপাদন বন্ধের বিষয়েও দেন নানা যুক্তি।
ফু-ওয়াং ফুডস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন বলেন, ‘স্বচ্ছতা-অস্বচ্ছতা বাদ দিলাম, আমার কথা হচ্ছে আমি নিয়ম ভাঙছি কিনা? আমি বিকাশে টাকা নিলে বা ক্যাশ টাকা নিলে কি নিয়ম ভাঙছে? প্রমাণও নাই আমি এই টাকা নষ্ট করে ফেলেছি। আমি যদি মাল কমায়-বাড়ায় সবকিছুর কি পিএসআই দিতে হবে?’
ফু-ওয়াং ফুডসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের অব্যাহত দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারনে বন্ধ হতে বসেছে কোম্পানিটি। সাধারণ শেয়ারহোল্ডার, শ্রমিক-কর্মচারী, ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহকারীদের সুরক্ষায় ডিএসই ও বিএসইসিকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান তাদের।