১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে এ দাবি জানা তারা। এ সময় আওয়ামী লীগের বিচার এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ না করা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে না যাওয়ার প্রত্যয়ও জানিয়েছেন তারা।
এর আগে বেলা ৩টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে বিকাল ৪ টায় সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা মিছিল আর ব্যানার, পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হতে শুরু করে। সমাবেশস্থলে আগতরা ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’সহ নানা স্লোগান দেন। এ যেন শহিদ মিনার থেকে নবযাত্রা!
বিকাল ৩টার আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর মঞ্চ থেকে স্লোগান শুরু হয়। পরে একজন শহিদের পিতার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।
শহিদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর পিতা আবুল হাসান বলেন, আমার ছেলে শাহরিয়ার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আন্দোলনের সময় মিরপুর ১০ এ শহিদ হয়েছে। আমাদের কান্না কখনো থামবে না, এই বেদনা শেষ হওয়ার নয়। খুনি হাসিনা ও তার হেমলেট বাহিনী আমাদের ওপর পাখির মতো গুলি চালিয়েছে। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের পর আমাদের মধ্যে শত্রু নেই। আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সংগ্রাম চলবে। তিনি বলেন, যারা সচিবালয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, বলতে চাই, আপনারা ‘রিয়েলিটি মাইনা’ নেন। আপনাদের ‘আম্মু’ আর দেশে ফিরবে না। আমরা তাকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি। এ দেশে হাসিনার পুনর্বাসন হবে না।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আগামীতে যে ঘোষণাপত্র আসবে, সেখানে প্রত্যেক শহিদের রক্তের ফোঁটার কথা উল্লেখ থাকতে হবে। যদি আমরা সে কথাগুলো না পাই, তা হলে বাংলার ‘চব্বিশের বাঘের বাচ্চারা’ তা মেনে নেবে না। ঘোষণাপত্রে ৫৩ বছরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, তা সংস্কারের ইঙ্গিত থাকতে হবে। আমরা এক নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরকারকে জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে ‘জুলাইয়ের প্রোকলেমেশন’ ঘোষণা করতে হবে। আমাদেরকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা একইসঙ্গে সংবিধান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নতুন সংবিধান গঠন করবে এবং আইনসভার সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।
নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমাদের সামনে এখনও খুনি ও খুনিদের দোসররা উন্মুক্ত ঘুরছে। আমরা গণহত্যার বিচার চাই, সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চাই, পাচারকৃত অর্থ ফেরত চাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের স্বস্তি চাই, আহতদের সুচিকিৎসা চাই।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, অভ্যুত্থানের ৫ মাস হলেও আমরা কাউকে দেখিনি জুলাই প্রোকলেমেশন ঘোষণার উদ্যোগ নিতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেই আবার দায়িত্ব নিতে হয়েছে ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমরা কালক্ষেপণ চাই না। আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে রাজপথে আছি। নব্বইয়ের মতো, একাত্তরের মতো জুলাইকে ব্যর্থ হতে দেব না।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল সমাবেশে বলেন, আমি খুনি হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলার কারণে ১৫ মাস জেল খেটেছি। বর্তমানে দেখছি, আওয়ামী লীগের খুনিরা নিজেদের খোলস পালটিয়ে বিএনপি এবং শিবিরে যোগ দিচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা হাসিনার বিচার চাই এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই।
গণঅভ্যুত্থানে নিহত মুগ্ধর পিতা মীর মোস্তাফিজুর বলেন, খুনিদের বিচার নিয়ে সরকারের যারা গাফিলতি করবে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই। মুগ্ধসহ যারা গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, অংশগ্রহণ করেছেন সবাইকে ‘বিপ্লবী যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দাবি জানাই।