নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অঢেল সম্পদ গড়েন তাপস।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও তার স্ত্রী আরফিন তাপসের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তাপস ও তার স্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ৮০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তাদের দুজনের ৩৬টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদে দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, ইজারা, নিয়োগ বাণিজ্য, দোকান বরাদ্দসহ আত্মীয়স্বজন ও তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও তার স্ত্রী আরফিন তাপস।  দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭ টাকা মূল্যের সম্পদের অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন। তিনি নিজের নামের ২৭টি ব্যাংক হিসাবে ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩০৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৮ টাকা জমা ও ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা উত্তোলন করে তার ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৩৯ কোটি ১৬ লাখ ২৫ লাখ ২৭৮ লেনদেন করেন।
একই সঙ্গে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৭ মার্কিন ডলার অস্বাভাবিক লেনদেন করেন। অন্য মামলায় আসামি করা হয়েছে ফজলে নূর তাপসের স্ত্রী আফরিন তাপসকে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি তার স্বামী শেখ ফজলে নূর তাপসের সহায়তায় আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৪০ লাখ ৮৯ হাজার ৯৮ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করেন। তার নিজের ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৯ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেন। অন্যদিকে ২ লাখ ২ হাজার ২৫৯ মার্কিন ডলার জমা ও ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ মার্কিন ডলার উত্তোলনসহ মোট ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৩ মার্কিন ডলার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। রোববার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ এই অর্থ গোপন ও স্থানান্তরের অভিযোগ এনে এজাহারে বলা হয়েছে, তারা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ দুর্নীতি দমন আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করেছেন।
দুদক বলছে, অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ গোপন ও আড়াল করার উদ্দেশ্যে জ্ঞাতসারে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, সরকারের অগ্রাধিকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তাপসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল টেন্ডার, ইজারা, নিয়োগ এবং দোকান বরাদ্দসহ অসংখ্য কাজ করে তিনি আত্মীয়স্বজন ও তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুরো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতির রাজত্ব করেন তাপস।
গত চার বছরে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত করেন তিনি। তাদের চাকরিচ্যুত করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন। ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিজেকে রীতিমতো রাজা ভাবতে থাকেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
গত চার বছরে ভারী গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবল নিয়োগ দেন। যার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওই নোটিসে তাকে গত ৩ নভেম্বর বেলা ১১টায় দুদকের সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। তখন দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত তিন সদস্যের অনুসন্ধান দলের প্রধান দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ওই নোটিস পাঠিয়েছেন।
ওই সময়ে ফজলে নূর তাপসকে পাঠানো দুদকের নোটিসে বলা হয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, তার স্ত্রী আফরিন তাপস শিউলি, ছেলে শেখ ফজলে নাশওয়ান এবং তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ফজলে নূর তাপসের ফুফু। সরকার পতনের পর তাপসকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
তিনি আগেই বিদেশে চলে গেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের সাবেক আইপিজি, আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তার মধ্যে তাপসও আসামি।

আরও পড়ুন