বৃহস্পতিবার , ৯ জানুয়ারি ২৫
দেশের সরকারি গুদামে প্রচুর চাল মজু রয়েছে। বেসরকারি চাল ব্যবসায়ীদের কাছেও অভাব নেই চালের। রাইস মিলগুলোতেও প্রচুর ধান এবং চালের মজুদ। দেশে আমনের ভর মৌসুম চলছে। সরকার বিপুল পরিমাণ চাল আমদানিও করেছে। জাহাজে জাহাজে চাল আসছে বন্দরে। অথচ বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দর কেজি প্রতি ৫ টাকারও বেশি বেড়ে গেছে।
এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। সংঘবদ্ধ একটি চক্র চাল নিয়ে নানাভাবে চালবাজি করছে বলে অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এই চালবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আমদানির চাল আসতে শুরু করেছে। চালের দাম দ্রুত কমে আসবে।
সূত্র জানায়, দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ পর্যাপ্ত। গতকালের হিসাব অনুযায়ী সরকারের গুদামে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৮ টন চাল, ৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৪২ টন গম এবং ৮ হাজার ৮০৯ টন ধান মিলে সর্বমোট ১২ লাখ ২২ হাজার ৫০৪ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এটি সরকারি গুদামের মজুদ। এর বাইরে চালের মকাম, চালের পাইকারি আড়ত, দোকান, মানুষের বাসাবাড়িতে প্রচুর ধান–চালের মজুদ রয়েছে।
খাদ্যশস্য মজুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এর বাইরে দেশে বর্তমানে আমনের ভর মৌসুম বিরাজ করছে। প্রচুর ফলন উঠে আসবে কৃষকের ঘরে। বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, অথচ চালের বাজার হু হু করে বাড়ছে।
এই বৃদ্ধিকে খুবই অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করে একাধিক ক্রেতা জানান, দেশীয় চালের দাম এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। আমদানিকৃত চাল হলেও ডলারের চড়া অবস্থায় মেনে নেয়া যেত। কিন্তু দেশের চাল দেশীয় বাজারে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার ব্যাপারটি রহস্যজনক।
এটি সংঘবদ্ধ কোনো চক্রের চালবাজি বলে মন্তব্য করে তারা বলেন, চালের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছে তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যেতো।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারের চালের আড়তদাররা জানান, গত এক সপ্তাহে জিরাশাইল সেদ্ধ বস্তায় (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৫০ টাকা, কাটারীভোগ সেদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৪ হাজার ২০০ টাকা, কাটারীভোগ আতপ বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, নাজিরশাইল সেদ্ধ ৩০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকা, স্বর্ণা সেদ্ধ ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা, বেতি আতপ ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকা এবং মোটা সেদ্ধ বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
২৫ কেজির আতপ চালের বস্তাপ্রতি দাম ১৯০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২শ টাকায়। চালের বাজারে অরাজকতা চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমিনুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা। গতকাল ফ্যামিলি মার্ট নামের দোকান থেকে সদাই করে বের হওয়ার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।