নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন : শেখ হাসিনা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শে হাসিনা। দীর্ঘ ৬১ দিনের ঘটনাপ্রবাহে দেশ ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।
ওই দিনই বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। এ খবরে আনন্দমিছিল নিয়ে রাজধানীর পথে পথে ঢল নামে লাখো মানুষের। গণভবন দখলে নেয় জনতা। থানায় থানায় হামলা হয়, আক্রান্ত হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং বহু নেতার বাড়ি
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জানান, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দুপুরে দেশ ছাড়ার পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হওয়ার মাঝখানে বাংলাদেশে কোনো সরকার ছিল না। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মীরা চলে যান আত্মগোপনে। কেউ কেউ দেশ ছাড়েন।
আন্দোলনের সূত্রপাত যেভাবে
গত ৬ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয়। বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৭ জুলাই সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভে অচল হয় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৯ জুলাই সারা দেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী। ১০ জুলাই কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ১৪ জুলাই কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রাজাকার’ শব্দ বলার জের ধরে রাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও। হামলায় আহত হন অন্তত তিন শতাধিক।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিরোধে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। ১৬ জুলাই আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে সরকার। এর মধ্যেই সড়ক অবরোধ, সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা এবং রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনার ভিডিও প্রকাশ পায়। এর জেরে বেড়ে যায় আন্দোলনের তীব্রতা। শেখ হাসিনা পালানোর পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সহিংসতার তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২১ জনের। এ অবস্থায় ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে এদিন, মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। রাজধানীতেই প্রাণ হারান ৪৯ জন।
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে সরকার। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ২৭ হাজার সেনা। আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার অভিযোগে সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে শত শত মামলা করা হয়। মামলায় হাজার হাজার মানুষকে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে দাবি ওঠে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের মৃত্যুর বিচার অবিলম্বে করতে হবে। এর পর শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আরও পড়ুন