শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জন্য সরকার দুটি সংস্থার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে কিছু পণ্য বিক্রি করে থাকে। এর মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে তেল, চিনি, ডাল বিক্রি করে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এবং রোজার সময় পেঁয়াজ, আলু, খেজুর এবং ছোলাও বিক্রি করে সংস্থাটি। আর খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করে সরকার।
সংস্থা দুটি যখন ট্রাকে করে এসব পণ্য বিক্রি করে তখন ট্রাকের পেছনে শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এতে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায় এবং অনেক ক্রেতাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য কেনার সময় এই হুড়োহুড়ি এড়াতেই ট্রাকসেল বন্ধ করেছে সরকার।
অবশ্য টিসিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, হুড়োহুড়ির কারণে ট্রাকসেল বন্ধ করা হয়নি, ট্রাকসেল বন্ধ করা হয়েছে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত কয়েকটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য ট্রাকসেল চালু করা হয়েছিল। সে সময়সীমা পার হওয়ায় বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সামনে রমজান মাস থাকায় টিসিবি এখন রমজানের পণ্য মজুদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটতে পারে বিধায় বন্ধ করা হয়েছে ট্রাকসেল। এমন তথ্য জানান টিসিবি যুগ্ম পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। জানা যায়, গত বছরের পুরো সময় দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর টানা ৯ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে চাল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল টিসিবি। এই কার্যক্রমের আওতায়, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্য তেল প্রতিলিটার ১০০ টাকায়, ২ কেজি মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ৫ কেজি চাল প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারতেন। এতে একজন গ্রাহকের অন্তত ৩৫০ টাকা বা তার বেশি অর্থ সাশ্রয় হয়। অথচ গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে হুট করেই ট্রাকসেল বন্ধ করে দেয় টিসিবি। এর ফলে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড না থাকায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২৮ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
টিসিবির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত অক্টোবরে তারা প্রথমে এক মাসের জন্য (শুধু নভেম্বর) সাময়িকভাবে এ কর্মসূচি (ট্রাকসেল) শুরু করেছিলেন। তবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালানো হয়। এরপর ট্রাকসেল চালু রাখার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।