বুধবা২৯ জানুয়ারি, ২০২৫
যুক্তরাজ্যে ছেলের বাসায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেকটা ভালো আছেন। দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনির সঙ্গে আনন্দে সময় পার করছেন। বেশ খোশ মেজাজে আছেন তিনি। এর ফলে খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য। লন্ডন থেকে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ম্যাডাম দুয়েক এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরতে চান। তবে তার ছেলে তারেক রহমানের চাচ্ছেন রোজার ঈদ পর্যন্ত ম্যাডাম লন্ডনে থাকুক। এখন দেখা যাক কবে দেশে ফিরেন।
তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসা প্রায় শেষ। দেশে ফেরার আগে উনাকে শেষবার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে। উনার মূল কিডনিতে যে সমস্যা ছিল তার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সতের দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে ভালো একটি থরো চেক আপ (সম্পূর্ণ দেহ) পেয়েছেন। অন্য জটিলতাও কেটেছে। আর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়ে গত শুক্রবার রাত তিনটায় (লন্ডনের সময় রাত ৯টা) দ্য লন্ডন ক্লিনিক থেকে তিনি সরাসরি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেন। বাসায় চলছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা।
দুইদিন আগে সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার সময়ের আলোকে জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা লিভার সার্জারি এলাউ করেননি। এখন কিছুটা সমস্যা কিডনিতে। ক্রিয়েটিনিন মাত্রা (কিডনির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে) ওঠানামা করছে। এতে উদ্বেগের কিছু নয়।
কবে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া? জবাবে এই চিকিৎসক জানান, বলা যায় মূল চিকিৎসা শেষ। এখন ফলোআপ করতে হবে। কবে দেশে ফিরবেন এটা ম্যডামের ওপর নির্ভর করছে।
দলের চেয়ারপারসন অচিরেই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। লন্ডনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অনেক ভালো আছেন। তিনি বাসায় ফিরে খুব হাসিখুশি আছেন। রোববার নেত্রীর সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমানসহ একসঙ্গে ডিনার করেছি। আমার মনে হয় তিনি ৬০ পার্সেন্ট সুস্থ হয়ে গেছেন। খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে না। লন্ডন ক্লিনিকেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখানে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
মালেক বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি দুটি টিম মিলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালের চেয়ে বাসায় বেটার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। রোববারও দেখলাম ডা. জুবাইদা রহমান বসে খাওয়াচ্ছেন। পাশে তারেক রহমান বসা।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া তার পুত্রবধূদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বাসায় যাওয়ার মানে হচ্ছে, তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। উনি অচিরেই দেশে যাবেন। দেশের জনগণ উনাকে দেখতে চান।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে সাংবাদিকদের জানান, ছুটি পেলেও খালেদা জিয়া সার্বক্ষণিক প্রফেসর জন প্যাট্টিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস, এই দুইজনের সার্বিক তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা নিয়মিত ফলোআপ করছেন। অর্থাৎ ইউকের যে নিয়ম, সেই নিয়ম মেনেই উনার চিকিৎসা চলছে।
গত ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেসে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। এই হাসপাতালটির লিভার বিশেষজ্ঞ জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসাধীন চলছে।৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি হয়নি। এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা দরকার। গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।