বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
গ্রামের নাম কামালপুর। কিশোরগঞ্জ হাওর এলাকার এক নিভৃত পল্লী। দুর্গম আর অতিদরিদ্র মানুষের এ গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির দুয়ারে পা রেখে কূটচাল আর ভাঁড়ামিকে আশ্রয় করে ধীরে ধীরে কপাল খুলতে শুরু করে তার। কালক্রমে সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও স্পিকার হন। একসময় আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান হাতে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদটিও জুটে যায় তার কপালে। কিন্তু লালসা পিছু ছাড়েনি। মুখে ছিল সরল কথা, আসলে তিনি ছিলেন গৃধ্নু প্রবৃত্তির। সেই লিপ্সা পূরণে অসততার পথ বেয়ে হয়ে ওঠেন হাওরের রাজাধিরাজ। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
শুধু তিনি নন, তার নাম ভাঙিয়ে পরিবারের সদস্যরা হাওরাঞ্চলে রাজত্ব কায়েম করতে রীতিমতো দানবে পরিণত হয়েছিলেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হয়েও তারা প্রত্যেকেই দুই হাতে টাকা কামিয়ে রাতারাতি বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
কিশোরগঞ্জে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা, গুলিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সাবেক শেখ হাসিনাসহ ১২৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনের নামে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তহমুল ইসলাম মাজহারুল বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ চেষ্টা করেছেন বলেও জানান তিনি। মামলায় আবদুল হামিদ ৩ নম্বর আসামি। আবদুল রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় কখনো তার ভাই-ভাতিজা, মামা, চাচা কখনো বা ‘লতায়-পাতায়’ গজিয়ে ওঠা অনেকেই আত্মীয় পরিচয় দিয়ে স্থানীয় মানুষের জমিজমা অবৈধ দখল, তাদের সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি আর এলাকার সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নিজের ভাই-ভাতিজাসহ নিকটাত্মীয়রা যখন তার নাম ‘বেচে’ দিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলকে নিজেদের তালুকে পরিণত করেছিলেন, তখনো এ রাষ্ট্রপতি ছিলেন নিশ্চুপ-নির্বিকার। তার ভাই-ভাতিজা, আত্মীয়স্বজনের দ্বারা নির্যাতিত-অসহায় মানুষের জন্য কোনো ভূমিকাই রাখেননি তিনি। দোষীদের কাউকে ডেকে টুঁ শব্দটি করেননি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে একে একে প্রকাশ পেতে থাকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অপকর্মের খতিয়ান। তার দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। একে একে হামিদ পরিবারের স্বেচ্ছাচার আর নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তারা।