নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

দেশের বিমানবন্দরগুলোতে স্বর্ণ চোরাচালান করতে নানান পদ্ধতি।

দেশের বিমানবন্দরগুলোতে স্বর্ণ চোরাচালান করতে নান পদ্ধতি অবলম্বন করে চোরাকারবারিরা। এগুলো সবই অবৈধ। তা রোধে সারাক্ষণ কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্যদিকে বিমানবন্দরে ব্যাগেজ রুলসের সুবিধা নিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান  পাচার হয়ে যায় পাশের দেশে। আগে ট্যাক্সসহ দুটি স্বর্ণের বার আনার অনুমতি ছিল, পরে তা একটি করা হয়। ব্যাগেজ রুলসের অপব্যবহার ঠেকাতে গত অর্থবছরে আইনটি সংশোধন করা হয়। এবার এই রুলসে আরও পরিবর্তন আনতে কাজ শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৩৪৬ কেজি স্বর্ণ ব্যাগেজ রুলসের আওতায় আনা হয়েছে। শুল্ক আদায় হয়েছে ২২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, জব্দ করা হয়েছে ৫০৭ কেজি স্বর্ণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছে ৩১ হাজার ৭৭৮ কেজি স্বর্ণ, শুল্ক আদায় হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, আর জব্দ করা হয়েছে ৬৯৭ কেজি স্বর্ণ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে ৪৩ হাজার ২০ কেজি স্বর্ণ, শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৬১ কোটি টাকা আর ৫৫৪ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ১৭ হাজার ৮৯৪ কেজি স্বর্ণ, শুল্ক আদায় হয়েছে ৬১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, জব্দ করা হয়েছে ৪১৭ কেজি স্বর্ণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত এসেছে ১ হাজার ২৬০ কেজি স্বর্ণ, শুল্ক আদায় হয়েছে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আর ৫৫ কেজি অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে আসা এক প্রবাসীকে দেখা যায় একজনকে স্বর্ণ হস্তান্তর করতে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে তাদের লোক এগুলো নিয়ে আসতে অনুরোধ করে, বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা অসংখ্য লোক প্রতিদিন তাদের স্বর্ণ নিয়ে আসে। এয়ারপোর্টে তাদের লোক রয়েছে।
অন্য একজন বলেন, সরকারকে ট্যাক্স দিয়েই বৈধভাবে স্বর্ণ আনা হয়েছে। কতবার একজন আনতে পারবে তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আনার পর কী করব এটি আমার বিষয়। পাচার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আটক করা।
কাস্টমস সূত্র বলছে, ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বৈধভাবে আনা এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ দেশে নেই। কোনো না কোনোভাবে দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। চলমান ব্যাগেজ রুলসে একজন যাত্রী কতবার  বছরে তিনবারের বেশি স্বর্ণ আনতে পারবেন না। এ জন্য একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হচ্ছে, যেখানে এই স্বর্ণ আনা যাত্রীদের তথ্য থাকবে। অর্থাৎ ওই যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও যেকোনো বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করলেও তার তথ্য অটোমেটিক আমাদের সফটওয়্যারে জমা হবে। তিন বা যতবার নির্দিষ্ট করা হবে তার বেশি হলেই ওই যাত্রী অটোমেটিক আটক হয়ে যাবে। এ রকম কয়েকবার ঘটলে তার বিদেশ যাওয়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
শাহজালাল বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা নিয়মিতভাবে বিদেশ গিয়ে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ এনেছেন এ রকম যাত্রীদের তালিকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকশ ব্যক্তিকে, যারা নিয়মিত দুবাই বা সৌদি আরব গিয়ে স্বর্ণ এনে দেশে চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেন। আর এদের ব্যাপারেই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এবার ব্যাগেজ রুলস সংশোধন হলে চোরাচালান অনেকটাই কমবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান ব্যাগেজ রুলসে একজন ব্যক্তি একটি করে স্বর্ণের বার আনতে পারবেন বলে বিধান রয়েছে। তাতে একটি বারের ১১৬/১১৭ গ্রাম ওজনের বারে ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। এভাবে একজন যাত্রী যতবার ইচ্ছা স্বর্ণ আনতে পারেন। এ জন্য চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়মিত দুবাই, সৌদি ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে স্বর্ণের বার আনেন। কিছু চোরাকারবারি আড়ালে থেকে যাত্রীদের টাকা দিয়ে স্বর্ণ আনান।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল-আমিন বলেন, ব্যাগেজ রুলসে পরিবর্তন আনার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মূলত কাজ করছে এনবিআর। তারা আমাদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়েছে। এ বিষয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে, সভায় পরিবর্তনের বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে।

আরও পড়ুন