দুয়ার খুলেছে বইপাগল মানুষের প্রাণের মেলার। এক বছরের অপেক্ষার শেষে আবার শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা অমর একুশে বইমেলা। ভাষার মাসের প্রথম দিনেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। বইমেলা শুরু হলেও প্রথম দিনে তেমন জাঁকজমক ছিল না মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার অনেক স্টল এখনও অপ্রস্তুত। চলছে নির্মাণকাজ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশনী স্টলে বই তুলতে ও বিক্রি শুরু করতে পারেনি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেরও অনেক স্টলের কাজ শেষ হয়নি।
গতকাল মেলার প্রথম দিন সরেজমিন দেখা যায়, মেলায় দর্শনার্থী ছিল কম। যেখানে-সেখানে পড়ে আছে স্টল তৈরির নির্মাণসামগ্রী। অনেক স্টলের কাজ শেষ হলেও এখনও স্টলগুলোতে বই তোলা হয়নি। আর কয়েকটি স্টলে চলছে বই তোলার কাজ। বেলা গড়ালেও আলো জ্বলেনি অনেক স্টলে।
তবে মেলার প্রথম দিন থেকেই মসজিদ ও টয়লেট ঠিকঠাক থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বইমেলায় আগতরা। খাবার পানির ট্যাঙ্কও বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তবে খাবারের স্টলগুলো এখনও ঠিকঠাক করে বসেনি। এ বিষয়ে বিল্লাল হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, আমরা এখানে স্টল দিয়েছি। প্রথম দিন বিধায় ছোট পরিসরে জায়গা নিয়ে বসেছি। দ্রুতই স্টল বড় করা হবে। এ বিষয়ে মোশাররফ হোসেন নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, স্টলের কাজ শেষ করতে আমাদের দুয়েক দিন সময় লাগবে। যত দ্রুত সম্ভব করছি।
এদিন আনন্দমেলা, দারুস সালাম বাংলাদেশ, মীনা বুক হাউস, পথিক, চিন্তাসূর, নয়নজুলি, সাড়ে ৩ দিনের পত্রিকা, মরিয়ম প্রকাশনী, শিল্পতরু প্রকাশনী, চন্দ্রদীপ, নবরাগ প্রকাশনী, আলোকায়ন, পড়ুয়া, সাহিত্য প্রকাশ, ছিন্নপণ, কেন্দ্রবিন্দু, ত্রয়ী প্রকাশনসহ আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্টল কাপড় দিয়ে মোড়ানো দেখা গেছে।
স্টল দেরিতে নির্মাণের বিষয়ে উত্তরণ প্রকাশনীর দায়িত্বে নিয়োজিত মাহমুদুল্লাহ শাওন বলেন, কিছু কাজ বাকি আছে। দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। আজকের মধ্যেই স্টলের কাজ শেষ করে বই তুলতে পারব। বইমেলার প্রথমদিকে বিক্রি কম থাকে এ জন্য একটু দেরি হলো।
পাঠকবাড়ি থেকে সানজিদা শান্তা বলেন, আমাদের স্টলের কাজ আজ শেষ হয়েছে। এখনও লাইট লাগানো হয়নি। এখনও বইগুলো ঠিকমতো সাজাতে পারিনি। এ জন্য বইও বিক্রি করতে পারিনি। বলাকা প্রকাশন থেকে মধুমিতা মৌ বলেন, প্রথম দিন তাই বিক্রি কম। আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়বে।
বড় বড় প্রকাশনীগুলোতেও এদিন বিক্রি কম হয়েছে। এ বিষয়ে প্রথমা থেকে জুনায়েদ নামে এক বিক্রেতা বলেন, আজ কিছুসংখ্যক বই বিক্রি হয়েছে। এটি একেবারে কমও না বেশিও না। মোটামুটি বলা যায়। সামনে বিক্রি বাড়বে। আগামী প্রকাশনী থেকে রাহুল কর্মকার বলেন, স্টল আমাদের আগেই তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের স্টলের বই কম বিক্রি হয়েছে।
ধানমন্ডি থেকে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন আসিফ আহমেদ। স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে বই দেখছিলেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, বইমেলায় প্রতি বছরই আসা হয়। তবে সাধারণত মেলার প্রথমদিকে আসা হয় না। আজ ছুটির দিন ছিল এ জন্য আসা। তবে এখনও কোনো বই কেনা হয়নি। পরে এসে কিনব।
ঘুরে ঘুরে বই দেখছিলেন শিহাব উদ্দিন। হাতে বইয়ের ব্যাগ। তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, আজ দুটি বই কিনেছি। বই দুটির একটি গল্পের আরেকটি ভ্রমণবিষয়ক। এর মধ্যে ভ্রমণবিষয়ক বইগুলোর দিকেই আমার বেশি আগ্রহ। ভালো বই পেলে বেশ কয়েকটি কেনার ইচ্ছা আছে।
বইমেলার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট উপস্থিতি থাকলেও মেলায় প্রবেশে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। এদিন নিরাপত্তায় কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। মেলা ঘুরে অনেক গেটে আর্চওয়ের ব্যবহার দেখা যায়নি।
এবার বইমেলায় স্টল সংখ্যা ৭০৮টি। ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত