রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ার ছেলে আবু সাঈদ। গত বছরের ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তার মতো শহিদদের রক্তের বিনিময়ে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের।
৩১ মার্চ ঈদের দিন সকাল। শহিদ আবু সাঈদের বাড়িতে দেখা গেছে বর্ণহীন নিরানন্দ ঈদ। শূন্যতায় ভরে আছে বাড়ির চারপাশ। বুকফাটা আর্তনাদে ভারী বাড়ির আকাশ-বাতাস। চারপাশে যখন সবাই ব্যস্ত ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে, তখন আবু সাঈদের স্মৃতি বিজড়িত কথা মনে করে কাঁদছেন মা-বাবাসহ তার ভাইবোনেরা।
প্রথমবারের মতো আবু সাঈদকে ছাড়া ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন বাবা-ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। যে আবু সাঈদের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যেতেন বাবা মকবুল হোসেন। এবার সে সন্তানের কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে তাকে। কবরের কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঈদের ছুটিতে বন্ধ হলে বাড়িতে ফিরে আসতেন আবু সাঈদ। সারাদিন ভাগ্নি-ভাতিজাদের সঙ্গে আনন্দে দিন কাটতো তার। আবু সাঈদের বাড়িতে আসার খবর শুনে ছুটে আসতেন তার বন্ধুরা। তাদের সঙ্গে দিনভর খেলাধুলা ও গল্পে সময় কেটে যেত আবু সাঈদের। প্রতিবেশী স্কুল-কলেজপড়ুয়া কেউ বাড়িতে এলে তার লেখাপড়ার খোঁজখবর নিতেন আবু সাঈদ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যেতেন। ঈদের আগের দিন ছোট বোনের বাড়িতে সেমাই-চিনিসহ ঈদের খাবারদাবার নিয়ে যেতেন।
আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘ভাইকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছি। ভাই বাড়িতে আসতো, আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটতো। কিন্তু এবারের দিন আমাদের দুঃখ-বেদনার, কান্নার। আমার চঞ্চল ভাই বাড়ির আঙিনায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত। ভাইয়ের কবর দেখলেই চোখে পানি চলে আসে।