নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

বর্ণহীন ঈদ শহিদ আবু সাঈদের পরিবারে।

আমারদেশ২৪ ডেস্কঃ
মুসলমানদের জীবনে ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। উৎসবের আয়োজন নিয়ে। মকবুল হোসেনের পরিবারেও ঈদ আসত আনন্দ আর উৎসবের আয়োজন নিয়ে। সেখানে ঈদ উপলক্ষে ছোট ছেলের টিউশনি থেকে পাওয়া টাকা মকবুল হোসেনের হাতে পড়লে চোখের কোণে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ত। প্রতিবছরের মতো এবারও তার জীবনে ঈদ এসেছে। কিন্তু এবারের ঈদে আনন্দ নেই। আনন্দাশ্রু নেই। উৎসবের আয়োজন নেই। আছে বেদনার অশ্রু। আছে বর্ণহীন নিরানন্দ ঈদ। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সবাই আছে, নেই পরিবারের ছোট ছেলে আবু সাঈদ। যে ছেলে একদিন বাবার হাত শক্ত করে ধরে বলেছিল, ‘আব্বা, বিসিএস দিয়ে বড় চাকরি করে একদিন সংসারের হাল ধরবো।’

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ার ছেলে আবু সাঈদ। গত বছরের ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তার মতো শহিদদের রক্তের বিনিময়ে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের।
৩১ মার্চ ঈদের দিন সকাল। শহিদ আবু সাঈদের বাড়িতে দেখা গেছে বর্ণহীন নিরানন্দ ঈদ। শূন্যতায় ভরে আছে বাড়ির চারপাশ। বুকফাটা আর্তনাদে ভারী বাড়ির আকাশ-বাতাস। চারপাশে যখন সবাই ব্যস্ত ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে, তখন আবু সাঈদের স্মৃতি বিজড়িত কথা মনে করে কাঁদছেন মা-বাবাসহ তার ভাইবোনেরা।

ভারী কণ্ঠে বাবা মকবুল হোসেন বললেন, গত ঈদেও  প্রাইভেট পরানো টাকায় সংসারে কিছু  খরচ করেছে সাঈদ। স্বপ্ন ছিল বিসিএস দিয়ে বড় চাকরি করে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেবে। সে স্বপ্ন এখন নেই। আমি চাই, হত্যা মামলার দ্রুত বিচার হোক।’

প্রথমবারের মতো আবু সাঈদকে ছাড়া ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন বাবা-ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। যে আবু সাঈদের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যেতেন বাবা মকবুল হোসেন। এবার সে সন্তানের কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে তাকে। কবরের কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঈদের ছুটিতে বন্ধ হলে বাড়িতে ফিরে আসতেন আবু সাঈদ। সারাদিন ভাগ্নি-ভাতিজাদের সঙ্গে আনন্দে দিন কাটতো তার। আবু সাঈদের বাড়িতে আসার খবর শুনে ছুটে আসতেন তার বন্ধুরা। তাদের সঙ্গে দিনভর খেলাধুলা ও গল্পে সময় কেটে যেত আবু সাঈদের। প্রতিবেশী স্কুল-কলেজপড়ুয়া কেউ বাড়িতে এলে তার লেখাপড়ার খোঁজখবর নিতেন আবু সাঈদ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যেতেন। ঈদের আগের দিন ছোট বোনের বাড়িতে সেমাই-চিনিসহ ঈদের খাবারদাবার নিয়ে যেতেন।

কিন্তু এবার কিছুই হয়নি এই পরিবারে। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদ এলেও আবু সাঈদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ঈদের নামাজ পড়া কিংবা ঈদের দিনে একসঙ্গে খাবার খাওয়া হয়নি।

আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘ভাইকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছি। ভাই বাড়িতে আসতো, আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটতো। কিন্তু এবারের দিন আমাদের দুঃখ-বেদনার, কান্নার। আমার চঞ্চল ভাই বাড়ির আঙিনায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত। ভাইয়ের কবর দেখলেই চোখে পানি চলে আসে।

আরও পড়ুন