নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতার এক অমর স্তম্ভ ২০২৪। গৌরবোজ্জ্বল এই বছরটি।

বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতার এক অমর স্তম্ভ ২০২৪। গৌরবোজ্জ্বল এই বছরট শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বিশ্বের নৃশংস এক স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার অদম্য লড়াই আর হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ হায়নার গ্রাস থেকে মুক্ত হয়েছে।

২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নবীন প্রজন্ম এক দানবের মুঠো থেকে দেশকে ছিনিয়ে এনেছে। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমকালীন বিশ্বের বিরল এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। জনতার এই অভ্যুত্থান গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে।

এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে স্বাধীন, সার্বভৌম অস্তিত্ব নিয়ে অনাগতকাল টিকে থাকার প্রেরণা জোগাবে। অপশক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির এই দীক্ষা এদেশের জনগণের রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছে। যেকোনো বৈরিতার মোকাবিলায় এই শক্তির জাগরণ ঘটবে। নানা সম্প্রদায়, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে।

২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট সেই ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ, যা কখনো হারিয়ে যাবে না। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাবে, কিন্তু ২০২৪ শতাব্দীর পর শতাব্দীর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবের স্মারক হয়ে থাকবে। সংখ্যা চিহ্নিত ২০২৪ সাল শেষ হবে না, আমরা কখনো ২০২৪-কে বিদায় জানাব না। এই বছরটি শেষহীন জুলাইয়ের মতো আমাদের স্মৃতি ও কর্মের মধ্যে উদ্ভাসিত হবে।

১৯৭১ সালের পরে ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একটি ঘটনাবহুল বছর। হত্য, জুলুম, অত্যাচার আর সীমাহীন লুণ্ঠনে দেশ এক ভয়াবহ অন্ধকার গহ্বরে ঢুকে পড়েছিল। দেশ বেহাত হয়ে গিয়েছিল। ১৫ বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সর্বস্তরের মানুষ গুম, হত্যা, নির্যাতন, লাখ লাখ মিথ্যা মামলা, বিনা বিচারে নৃশংস হত্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল।

২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের লড়াইয়ে নামে। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ইতিহাসের পাতায় হাজারো শহীদ আর হাজার হাজার আহত ছাত্র-জনতার রক্তভেজা রাজপথে বিজয়ের পতাকা তুলে ধরে।

স্বৈরাচারের সশস্ত্র অনুগত বাহিনী ও দলীয় গুণ্ডা ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় নিরস্ত্র জনতার প্রতিরোধে পৃথিবীর নিকৃষ্ট, নৃশংস স্বৈরাচারের পতন ঘটে। গণহত্যাকারী স্বৈরাচার হাসিনা প্রাণ বাঁচাতে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।

স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের স্বৈরাচারী শাসন দেশকে চরম বিপর্যস্ত করে, হাজার হাজার মানুষ গুম ও হত্যার শিকার হয়। লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়। লুন্ঠন করে দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করে। শেখ হাসিনা তার পিতার একই পথ অনুসরণ করে বিনাভোটে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে একটানা ১৫ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাখে। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ঘটে। বছরের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো হলো-

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান
২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল বছর। এই বছরটি ইতিহাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারের পতনের বছর হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৫ বছরের স্বৈরাচার হটানোর এটি ছিল চূড়ান্ত পর্ব। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধাপে ধাপে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার উৎখাতের একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়।

২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়। জুলাইয়ে মাঝামাঝি থেকে এই আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার পর সরকারি বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ধারাবাহিক এই আন্দোলন ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়।

এই আন্দোলনে তৎকালীন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ভয়াবহ দমন নিপীড়ন শুরু করলে এটি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পলায়ন করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ এ সময় সাংবিধানিক সংকটে পড়ে এবং এর তিন দিন পরে নোবেল বিজয়ী, বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদ।

বছরের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা

হাসিনার তল্পিবাহক আদালতে ড. ইউনূসকে সাজা
২০২৪-এর শুরুতে ১ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালত গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তাবেদার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ৭ জানুয়ারি দেশেবিরোধী দলবিহীন একতরফাভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন ছিল দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা। ২০২৪-এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভুয়া নির্বাচন শেখ হাসিনার পতনের জন্য পটভূমি তৈরি করে। দেশের জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য গড়ে ওঠে।

পাঠ্যবই বিতর্ক
১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আলোচনায় আসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়।

 

 

আরও পড়ুন