সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ তিন বিমান বন্দরের চার প্রকল্প থেকে ৮১২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে পৃথক চারটি মামালা দায়ের করেছ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান(তৎকালীন সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার), এ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও বিসিবির বোর্ড পরিচালক মাহবুবুল আনামসহ ১৯ জনকে আসামি করে ৪টি মামলা করেছে দুদক।আজ সোমবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারিক–হাবিবুর-মাহবুবুল ছাড়াও চারটি মামলায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব মো: মুহিবুল হক, বিমানের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, এ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও বিসিবির বোর্ড পরিচালক মাহবুবুল আনাম ও এ্যারোনেসের পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদেকে আসামি করা হয়েছ।
এছাড়া পৃথকভাবে শাহালালের রাডার স্থাপন প্রকল্পের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা প্রকল্পিটর প্রকল্প পরিচালক আফরোজা নাসরিন সুলতানা, সাবেক প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মনজুর আহমেদ, থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুবেন্দু বিকাশ গোস্বামীকে আসামী করা হয়েছে।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের মামলায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মইদুর রহমান মো. মওদুদ, প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক যুগ্ম সচিব মো, আনিছুর রহমানকে আসামী করা হয়েছে।
অন্যদিকে কক্সবাজার বিমান বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মো. শফিকুল ইসলাম ও কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়-৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো: ইউনুস ভূইয়া।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, এ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম এবং পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তারা বর্ণিত বিমান বন্দরসমূহের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করছেন।
দুদক সূত্র জানা যায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকায় “Installation of RADAR with CNS-ATM’ প্রকল্প থেকে ২০০ কোটি, শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ২১২ কোটি টাকা ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ও রানওয়ে নির্মান প্রকল্প থেকে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা চারটি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রাডার ইনস্টল ও সিএনএস–এটিএম প্রকল্পের ৭৩০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয় Thales LAS France SAS নামীয় একটি ফ্রেঞ্চ কোম্পানীকে। উক্ত কোম্পানীর সাথে আ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনালকে কো-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে।
দুদক জানায়, Thales এর কোন সিভিল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকেনা। নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে ইলেক্ট্রিক এন্ড ম্যাকানিক্যাল কাজের সাথে সিভিল কাজ একীভূত করে ১৫০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মাহবুবুল আনামের প্রতিষ্ঠান অ্যারোনেসকে উক্ত কাজে সম্পৃক্ত করা হয়।
এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করার অভিযোগ আনা হয় অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।