শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে অনেকটাই ফাঁকা মাঠ পেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর ক্রমেই রাজনীতির মাঠের দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী। দলটির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কয়েকটি পরিচিত ইসলামপন্থি দল। এ ছাড়া ঘোষণা দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল সামনে নিয়ে আসছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সবমিলিয়ে ক্রমেই বিরোধী পাল্লা ভারী হচ্ছে বিএনপির সামনে। আপাতত দলগুলোর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সামনের নির্বাচন নিয়ে যেই আভাস দিচ্ছেন সেটিই স্পষ্ট হচ্ছে দিন দিন। নেতাকর্মীদের বারবারই সতর্ক করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে অনেক অনেক কঠিন হবে। আপনাদের একশ পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি; আপনারা কেউ ভাবতে পারেন, এখানে তো প্রধান প্রতিপক্ষ নেই কিংবা দুর্বল প্রতিপক্ষ, সুতরাং নির্বাচন খুব সহজ হবে। নো, নো অ্যান্ড নো। এ নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচন থেকে অনেক অনেক কঠিন হবে। ইতিমধ্যে সেই আলামত দেখা যাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির সঙ্গে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাওয়া জামায়াতে ইসলামী দুদিন আগে বৈঠক করেছে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে। দল দুটির শীর্ষ নেতা আলোচনা করেছেন কীভাবে ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। যা নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করতে পারে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের এই বৈঠক রাজনীতির মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ সময়ের আলোকে বলেন, এটি ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হোক এটি জনগণ চাচ্ছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ঐক্য নিয়ে আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে। সে জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। আদর্শগত কিছু তফাৎ থাকলেও আমরা নীতিগত জায়গায় এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টা করছি। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে ঐক্য একটি শেইপ (কাঠামো) নেবে। কে কীভাবে নির্বাচন করবে, জোটগত বিষয়, এসব সময় হলে স্পষ্ট হবে।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম সময়ের আলোকে বলেন, বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে। আমরা কোনো জোটে বিশ^াসী নই। বাংলাদেশে জোটের ইতিহাস ভালো নয়। জোট হলে একটি দলকে প্রধান করতে হয়। এ জন্য আমরা ইসলামী জোটের বদলে নির্বাচনি সমঝোতা চাই। এক আসনে একজন প্রার্থী দেওয়া হবে ইসলামী জোটের পক্ষ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে ভাবনা বাড়াচ্ছে বিএনপির। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সময়ের আলোকে বলেন, মাঠে জামায়াত এখন আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছে। এখন তারা হাত পাখাকেও (ইসলামী আন্দোলন) সঙ্গে নিচ্ছে। জামায়াত নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে এখনও কিছু বলছি না। কিছুটা বলার চেষ্টা করছে রুহুল কবির রিজভী (বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব)। ছাত্রনেতাদের ও জামায়াতের বক্তব্য মিলে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাচ্ছে তারা কী চায়। দেখা যাক সামনে বাতাস কোনদিকে মোড় নেয়।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের বাইরে ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহ’ নামে ছয়টি দলের একটি জোট আছে। এই জোটের শরিক দলগুলো হচ্ছে- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক), মুসলিম লীগ (আবুল খায়ের), খেলাফত মজলিস (আহমদ আবদুল কাদের), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। অবশ্য ইসলামী ঐক্য আন্দোলন-নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। আর খেলাফত আন্দোলন জোটের অবস্থানের বাইরে গিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের অধীন ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।
ইসলামী জোটের ঐক্যে থাকা খেলাফত মজলিস দুদিন আগে বৈঠক করেছে বিএনপির সঙ্গে। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল সময়ের আলোকে বলেন, ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।
ইতিমধ্যে জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামী দলসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শুধু নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ঐক্য হবে। আমাদের পরিকল্পনা সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া। প্রতি সংসদীয় আসনে একজন এমপি প্রার্থী থাকবে ইসলামী জোটের। এমন সমঝোতার ভিত্তির ঐক্য হচ্ছে।