ব্রিটেনে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম থেকে সরে আসার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ট্রেজারি সিটি মিনিস্টার ও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক।
একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরিবারকে ৪০০ কোটি পাউন্ট আত্মসাতে তিনি সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আছে। রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটম বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যালয় ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশন দেখাশোনা করেন টিউলিপ। কিন্তু এই অফিস ইউক্রেন যুদ্ধে রোসাটমের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তিবিশেষের কমপক্ষে ৪৫টি আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে নিজ পরিবারের সদস্যদের ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে তদন্তও শুরু করেছে তারা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটম (রাশিয়ান ফেডারেশন স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন)। ডেইলি মেইল বলছে, ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংশন ইমপ্লিমেন্টেশনের (আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন কার্যালয়) দায়িত্বে রয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ইউক্রেনে হামলার সঙ্গে রোসাটমের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এর সঙ্গে যুক্ত ৪৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেনের এই সরকারি দফতর।
এ ক্ষেত্রে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করার কথা টিউলিপের। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার দায়ে টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যালয়ের দায়িত্ব থেকে অপসারণের জোর দাবি জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় হোম অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স। তিনি বলেছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারকে দুর্নীতিবিরোধী সব কর্মকা- থেকে টিউলিপকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কেননা টিউলিপের ব্যক্তিগত লেনদেন সম্পর্কে স্বচ্ছ উত্তর পাওয়া যায়নি।
দুদক বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তার খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আগস্টে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের তোপে শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা। বাংলাদেশের হাইকোর্টে অভিযোগ উঠেছে যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০ বিলিয়ন পাউন্ড সরাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন টিউলিপ। ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শেখ রেহেনার বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। হাসিনা এবং তার বোনের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে এসব অর্থ মালয়েশিয়াতে পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। সম্প্রতি টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিন্ন আটটি প্রকল্প থেকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুদক। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এখনও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাখ্যা করেছেন তারা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের আরও চারজনের অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি এবং রেকর্ড সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে দুদক। এখন টিউলিপকে ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংশন ইমপ্লিমেন্টেশনের দায়িত্ব থেকে সরানো হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্টরা।