নিউজ ডেস্কঃ
মিরপুর-১ নম্বর থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন রহিম মোল্লা নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, মিরপুর থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু কোনো বাসেই তিনি উঠতে পারছেন না। বাসের সহকারী-চালক ‘সদরঘাট ডাইরেক্ট ১০০ টাকা’ বলে যাত্রীদের ডাকছেন। পথিমধ্যে যেখানেই নামবেন যাত্রীদের ১০০ টাকাই দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন চালক ও হেলপাররা।
ডিএমপি (ট্রাফিক) মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার মো. রায়হান উদ্দিন মুরাদ সময়ের আলোকে এ প্রসঙ্গে বলেন, অবশ্যই এ ধরনের কাজ যারা করছেন তারা আইন লঙ্ঘন করছেন। আমরা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে ট্রাফিক বিভাগ সুনির্দিষ্ট কিছু আইন নিয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিঅরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে শাস্তির এখতিয়ার আরও বিস্তৃত। তারা এ বিষয়ে আরও জোরালো ভ‚মিকা রাখতে পারেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটগামী লোকাল বাস সার্ভিস সেলফি পরিবহনে যাত্রীপ্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু ৩০০ টাকার হাঁকডাক ছেড়ে যাত্রী তুলছেন এখানকার শ্রমিকরা।
অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন বাসশ্রমিকরা। কুষ্টিয়ার যাত্রী সিয়াম রহমান গাবতলীতে পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে তিনি লোকাল বাসে করে যাবেন কুষ্টিয়া।
তিনি অভিযোগ করেন, পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত সবসময় ১৫০ টাকা দিয়ে যাই। কিন্তু আজ (শুক্রবার) ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা। কিন্তু কোনো উপায় নেই, যেতে তো হবে। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, কার কাছে অভিযোগ করব? কে আমাদের এসব ভোগান্তি দেখবে? সবাই এসব বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি।
প্রতিটি বাস টার্মিনালে বাড়তি ভাড়া না নিতে সতর্কতামূলক মাইকিং করতে দেখা যায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারপরও বাড়তি ভাড়া অদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বাসমালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেল তারা জানান, ‘বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না, বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। সারা বছর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেওয়া হয়। ঈদে নির্ধারিত ভাড়াটাই নেওয়া হচ্ছে।’ আবার কারও মতে, ‘ঈদে যাওয়ার পথে যাত্রীর চাপ থাকলেও ফেরার পথে খালি আসতে হয়। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে।’
ভাড়া বেশি নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বাস শ্রমিকরা। লোকাল সার্ভিস বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজের চালকের সহকারী নুরুল বলেন, ঘাটের ভাড়া ২০০ টাকা। ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ সময় যাত্রী পাওয়া যায় না, তাই কিছুটা কম নেওয়া হয়। কারণ ওদিক থেকে গাড়ি আসার সময় আবার যাত্রী আনলে গড়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এখন আসার সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদের সময় ভাড়া কম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ভাড়া বেশি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব। বর্তমানে আমাদের একটি টিম অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অভিযান শুরু হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো বাস এ রকমভাবে যাত্রী হয়রানি করতে পারে না। আমরা বিআরটিএর মেজিস্ট্রেটরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামবেন।
ঈদের আগে গত বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। সেদিন বিকাল থেকেই কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের চাপ বাড়ে। বাস কাউন্টার মাস্টাররা জানান, এবার লম্বা ছুটি থাকায় প্রান্তিক জেলাগুলোর যাত্রীরা ধাপে ধাপে রাজধানী ছেড়েছেন।
সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন, গ্রিন লাইন, এনা পরিবহন, শাহ ফতেহ আলীর মতো বড় কোম্পানির বাসগুলো আগাম টিকেটের যাত্রী পার করছে। এসব বাসে অগ্রিম টিকেটেও অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ছোট কোম্পানির বাসগুলোয় ডেকে ডেকে যাত্রী নিলেও সেখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিআরটিএ-কে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বিনিময় পরিবহনের বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পায় বিআরটিএ। আর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে পরিবহনটির শ্রমিকরা শুরু করে দেন বিক্ষোভ। বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত জরিমানা না করে বাসটিকে সাত দিন সাসপেন্ড করে মুখ রক্ষা করে কর্তৃপক্ষ।