শনিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং সরকারের প্রতিরোধ তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে, তবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এই তৎপরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে কোনো আন্তঃরাষ্ট সরকার আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (যা আনসার আল-ইসলাম নামেও পরিচিত) এবং আইএসআইএসের সহযোগী নব্য-জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (নব্য জেএমবি) বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
২০২৩ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের দ্বারা পরিচালিত একটি হামলায় দুই সেনাসদস্য নিহত হন। এর আগে মার্চ মাসে একই ধরনের আরেকটি হামলায় একজন সেনাসদস্য নিহত হন। কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ২০২২ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে আল-কায়েদা প্রেরিত নতুন একটি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরক্বীয়ার (জেএএইচএস) জন্য প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করেছে। তবে ২০২৩ সালের শুরুতেই জেএএইচএসের কার্যক্রম অনেকাংশে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জুলাই মাসে সংগঠনের কথিত আমিরকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৫ সালে বাংলাদেশি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ২০২২ সালের নভেম্বরে ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে হামলার পর পালিয়ে যান এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত পলাতক ছিলেন।
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন (সংশোধিত) সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটক করার জন্য ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালে সরকার বিতর্কিত ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে এবং এর নামকরণ করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (সিএসএ)। ন্যাশনাল পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং আধা সামরিক র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-যাকে ২০২১ সালে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়-সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
২০২৩ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৬৩ জনকে গ্রেফতার করে এবং ৫৫টি মামলা করে। বাংলাদেশ স্থল ও সমুদ্রসীমান্ত পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং কার্গো ও যাত্রী স্ক্রিনিংয়ের জন্য উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং ঢাকার নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উন্নয়ন সাধন করেছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী ও পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয় দিয়েছে। যদিও ক্যাম্পে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের দ্বারা কোনো সন্ত্রাসী হুমকি সৃষ্টি হয়নি।
বাংলাদেশ এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের সদস্য এবং অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ইউনিট ইগমন্ট গ্রুপের অংশ। ২০২৩ সালে এতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সবশেষে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের কিছু পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।