নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া মেয়র হানিফ সেতু দখল।

facebook sharing button
twitter sharing button
linkedin sharing button
blogger sharing button
pinterest sharing button
sharethis sharing button
 শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর নিচের অংশ দখল করে ঘোড়া রাখার জন্য গড়ে তুলেছেন জিসান টম টম সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী বাবু। এসব ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফ্লাইওভারের নিচের একটা অংশ নিজের আয়ত্তে নিয়েছেন তিনি।
বাবু বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এখান থেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া দিয়ে আসছি। আমার সংগ্রহে ৩০টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। আর এগুলো চালানোর জন্য রয়েছে ৬০টি ঘোড়া। যা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ভাড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া হয় এসব গাড়ি।
প্রতিটি গাড়ির জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকি। তবে কেউ চাইলে দিন ও ঘণ্টা হিসাবেও গাড়ি নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যয়ও কম নয়, কারণ এগুলোকে পরিচর্যা ও খাবারের জন্য প্রতিদিন খরচ হয় অনেক টাকা। তা ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থানের জন্য সিটি করপোরেশনের লোকদের ও পুলিশকেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
ফ্লাইওভারের নিচে আস্তাবল গড়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে মো. বাবু বলেন, সরাসরি সিটি করপোরেশন থেকে কোনো অনুমতি নিইনি। তবে স্থানীয় কিছু নেতার মাধ্যমে বন্দোবস্ত করে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া দিয়ে আসছি।
বর্তমানে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও তিনি রয়ে গেছেন ঠিক আগের মতোই।
সরেজমিনে দেখা যায়, চানখাঁরপুল এলাকায় মিডিয়ানের ওপর রাখা হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া, বিভিন্ন দোকানের মালামাল। যেখানে অন্তত ৪০টি ঘোড়া ও কিছু ঘোড়ার গাড়ি দেখা গেছে। ঘোড়াগুলোর খাবারের উচ্ছিষ্ট ও মল-মূত্র চারপাশে  গেছে। এ ছাড়াও বঙ্গবাজার থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের অংশে রয়েছে বিভিন্ন দোকান ও গ্যারেজ। ফুলবাড়িয়া থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত অংশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী জুতা ও মালামালের দোকান। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এলাকায় রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। নিচের অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কব্জায়। এসব কারণে ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীতে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। যারা এগুলো দখল করে রেখেছেন তারা স্থানীয় প্রভাবশালী, সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারী ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চলেন।
 হানিফ উড়াল সেতুর সাড়ে ১১ কিলোমিটার নিচের অংশ বিভিন্নভাবে দখল ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায় রাস্তার ওপর প্রায় ২৯ কিলোমিটার জুড়ে থাকা ৭টি উড়াল সেতুর নিচের জায়গা নিয়ে যেন ভাবনা নেই দুই সিটির। ফলে রাজধানীর অধিকাংশ উড়াল সেতুর নিচের জায়গা দখল হয়ে গেছে। সবার চোখের সামনে এই দখলবাণিজ্য চললেও উদ্ধারে নেই কোনো উদ্যোগ। সেখানে ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, বিভিন্ন দোকান, গাড়ির গ্যারেজ ও কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। মাদকসেবী, ছিন্নমূলদের আস্তানা আর ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গা। এতে করে ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে জনভোগান্তি। সিটি করপোরেশনের সঠিক তদারকি ও যথাযথ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নগরবিদরা।
তারা মনে করেন, ফ্লাইওভারগুলোর নিচের জায়গা দখলের কারণে পথচারীদের ভোগান্তির সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, উড়াল সেতুগুলোর ওপরের অংশ যথেষ্ট পরিষ্কার থাকলেও নিচের অংশ যেন ময়লার ভাগাড়। যেখানে ময়লা-আবর্জনা, বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড, বিচিত্র দোকান নির্মাণ করে দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেছে অনেকে। এতে করে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের মতো পর্যাপ্ত রাস্তা ও ফুটপাথের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় সাধারণ মানুষকে। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করা হলেও নেই সঠিক তদারকি। যদিও ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশের দখল ঠেকাতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পুরো অংশকে আটভাগে ভাগ করে রক্ষণাবেক্ষণ করার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর নিচে অবৈধ দখলের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী সময়ের আলোকে বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে আস্তাবল গড়ার বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানি না। সেখানে ঘোড়া রাখার জন্য দক্ষিণ সিটি কাউকে কোনো ধরনের অনুমতি দেয়নি। সেই জায়গা দখল করে কিছু করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, দখলদারদের কাছ থেকে সিটি করপোরেশন কোনো ধরনের টাকা নেয় না। আর এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যদি কেউ টাকা নিয়েছে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে তা হলে বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গা পেয়ে অনেকে দখলের চেষ্টা করছে। তাদের এই কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষও স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে। যদি নগরবাসী সচেতন হতো তা হলে এসব জায়গা অবৈধ দখল হতো না। কারণ আমাদের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না।
এই বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানবলেন, উড়াল সেতুগুলোর দখলরোধে এখনও অনেক কিছু করার আছে। এর জন্য সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু ফ্লাইওভারগুলো যারা পরিচালনা করেন তাদের উচিত দখলের বিষয়গুলো ভালো করে খেয়াল রাখা। সবকিছু শুধু সিটি করপোরেশনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব। এতে করে যেমন দখলরোধ করা যাবে, তেমনই সাধারণ মানুষ বসার জন্য জায়গা পাবে। এ ছাড়া রাজধানীর সব ফ্লাইওভারের নিচের অংশে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা সম্ভব। এতে করে শহরেও বাড়বে সবুজা থাকে তা হলে আইনের আওতায় আনাতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরও যদি পরিবর্তন না আসে তা হলে তা হতাশাজনক। অবৈধ দখল নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বেশি এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু এখন কোনো মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নেই, তাই কাজগুলো আরও জটিল হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন