নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

লন্ডন থেকে ৪ চিকিৎসক ফিরছেন আজ এখনই দেশে ফিরছেন না বেগম খালেদা জিয়া।

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
যুক্তরাজ্যে ছেলের বাসায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনই দেশে ফিরছেন না। আরও কয়েক সপ্তাহ পর তিনি দেশে ফিপুরে খালেদা জিয়ার চারজন সফরসঙ্গী চিকিৎসক দেশে ফিরছেন। চিকিৎসকের ভাষ্য, চূড়ান্ত ফলোআপ শেষ করেই বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার তারিখ ঠিক করা হবে।
বেগম জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার শুক্রবার রাতে সময়ের আলোকে বলেন, আমরা চারজন মূল চিকিৎসক দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। দোয়া করবেন যাতে সঠিকভাবে দেশে ফিরতে পারি। ডা. জাহিদ ও মামুন রয়ে গেছেন। দেশে ফিরে আমরা জুমে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকব।
তিনি বলেন, ম্যাডাম অনেকটা ভালো আছেন। ছেলের বাসায় চিকিৎসা চলছে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে বেশ ভালো আছেন। কয়েক দিন পর হয়তো আবারও ফলোআপের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে আবার প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না তিনি কবে দেশে ফিরছেন। অর্থাৎ ম্যাডাম যখন চাইবেন তখন ফিরবেন। আমরা আবার লন্ডন গিয়ে উনাকে নিয়ে আসব।
আরেকজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ছিলেন মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্য। তাদের মধ্যে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম ফখরুদ্দিন সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল দেশে ফিরে আসছেন। সপ্তাহখানের মধ্যে অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনও দেশে ফিরবেন। তবে ডা. মোহাম্মদ আল মামুন বেগম জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন।
তিনি বলেন, ম্যাডাম দ্য লন্ডন ক্লিনিকে সেরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। সেখানে বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন। পুরো বডি চেকআপ করা মানে অনেকটা আরোগ্য লাভ করা। তিনি শিগগির দেশে ফিরতে চান। তবে তার ছেলে তারেক রহমান চাচ্ছেন রোজার ঈদ পর্যন্ত ম্যাডাম লন্ডনে থাকুক। এখন দেখা যাক, কবে দেশে ফেরেন। আর চূড়ান্ত ফলোআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনির সঙ্গে খালেদা জিয়া আনন্দে সময় পার করছেন। বেশ খোশ মেজাজে আছেন তিনি। এর ফলে খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা বেশ ভালো।
এ চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসা বলা যায় শেষ। দেশে ফেরার আগে উনাকে শেষবার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে। উনার কিডনিতে যে সমস্যা ছিল তার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অন্য জটিলতাও কমছে। আর আগেই বলেছি, স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।
টানা ১৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার রাতে দ্য লন্ডন ক্লিনিক থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। সম্প্রতি লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার সময়ের আলোকে জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। এখন কিছুটা সমস্যা কিডনিতে। যদিও এতে উদ্বেগের কিছু নেই।
দুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য অত্যন্ত উদগ্রীব। উনি বলেছিলেন, চলো আমরা দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাই। দেশই আমাদের জন্য ভালো।
জাহিদ হোসেন বলেন, চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ ছিলেন। উনার বেশ কিছু পরীক্ষা আমরা করিয়েছি, যেগুলো এখানেও সম্ভব হয়নি। সেগুলো উনারা (লন্ডন ক্লিনিক) করিয়েছে। কিন্তু তার রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। সেগুলো পাওয়ার পরপরই সিদ্ধান্ত হবে উনি কত দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।
তিনি জানান, বেগম জিয়া সার্বক্ষণিক প্রফেসর জন প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস-এই দুইজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন এবং মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বাসায় নিয়মিত ফলোআপ করছেন। অর্থাৎ ইউকের যে নিয়ম, সেই নিয়ম মেনেই উনার চিকিৎসা চলছে।
গত ৭ জানুয়ারি বেগম জিয়ার কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেসে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। এ হাসপাতালটির লিভার বিশেষজ্ঞ জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। ৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি হয়নি। এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২ রক্তনালির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন