পবিত্র কুরআনে শবে কদরকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হয়েছ। রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাতে এই পবিত্র রজনি। নির্দিষ্ট করে শবে কদর চিহ্নিত করা হয়নি। হাদিস থেকে জানা যায়, নবীজি (সা.) শবে কদর সম্পর্কে সাহাবিদের অবগত করার জন্য বের হয়েছিলেন। কিন্তু পথে ২ ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করতে গিয়ে শবে কদরের নির্দিষ্ট রাতের কথা ভুলে যান। তবে বিভিন্ন হাদিসের ইশারা ও আলেম-ওলামাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু সম্ভাব্য দিন সম্পর্কে অনুমান করা যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো’ (বুখারি : ২০১৭)। বিশুদ্ধ হাদিসে কদরের রাত চেনার বেশ কিছু আলামতের কথা এসেছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো-
প্রথম আলামত : শবে কদরের একটি আলামত হচ্ছে সূর্যের তেজ কম থাকা। সূর্যোদয়ের সময় তীব্র ঝলকানি থাকবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘…ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না। (মুসলিম : ১৬৭০)
দ্বিতীয় আলামত : রাতে বিশেষ আরামবোধ হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠান্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনে খুযাইমা : ২১৯২)
তৃতীয় আলামত : রাতের বাতাস হবে বিশেষ প্রশান্তিদায়ক। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ দশ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাত্রে নিজের (আমলের) হিসাব নিতে দাঁড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর এই রাত্রি আছে বেজর রাত্রিগুলোতে : নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।’ নবীজি আরও বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনা) থাকবে। না ঠান্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতে চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২২৭৬৫)
চতুর্থ আলামত : এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠান্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯)
পঞ্চম আলামত : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রয়েছে সপ্তম অথবা নবম, অথবা বিংশ, যে রাতে (পৃথিবীর) নুড়ি পাথরের চেয়ে বেশিসংখ্যক ফেরেশতারা জমিনে নেমে আসে।’ (মাজমাউল জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৮)।
উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল কদর’-এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেছিলেন। এ সময় দুজন ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের ‘লাইলাতুল কদর’-এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা তোমাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। তোমরা শেষের বেজোড় রাতে এর সন্ধান করো।’ (বুখারি : ৪৯)।