আমার দেশ ২৪ ডেক্স।
মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫
শিক্ষার্থীদের স্কুল বেঞ্চে সাজানো সারি সারি সবজির ডালা। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় সবজি। এসব সবজির নাম এবং বিভিন্ন গুণাগুণ তুলে ধরছে কোমলমতি খুদে শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী তার চেনা সবজি সম্পর্কে অন্যকে জানাচ্ছে। সোমবার চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এই দেশীয় সবজি উৎসব।
শিশুদের দেশীয় সবজির প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকারক চটকদার খাবার থেকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যতিক্রমী এক উৎসবের আয়োজন করে চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুল। ‘বেশি বেশি সবজি খাও, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে মেধাবী হও, কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়াও’ এই স্লোগানকে ধারণ করে আয়োজিত উৎসবে প্রায় ৩০টির বেশি দেশীয় সবজি নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে- বরবটি, শিম, মটরশুটি, ফুলকপি, ব্রুকলি, কুমড়া, কুমড়া ফুল, কাঁচা কলা, কলাগাছের আইলকা, বিভিন্ন প্রজাতির শাক, ধনেপাতা, লেটুস, বাঁধাকপি, সজনে পাতা, লাউ, থানকুনি, গাজর, মুলা, শালগম, বিট, গোলআলু, মেটেআলু, পেঁপে, টমেটো, বেগুন, চালকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শ, পটোল, শসা ইত্যাদি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিন্ময়ী, মেহজাবিন, তাসরিক আরাফ, অয়ন মজুমদারসহ অন্যরা জানায়, এই উৎসব আয়োজনের ফলে তারা অনেক সবজির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব সবজির গুণাগুণ সম্পর্কে নিজেরা জেনেছে এবং অন্যকে জানাচ্ছে। সবমিলিয়ে এই আয়োজনটি তাদের অনেক ভালো লেগেছে।
অভিভাবক ইশরাত জাহান ইভা জানান, এমন উৎসবের সঙ্গে তারা এবং শিক্ষার্থীরা আগে কখনো পরিচিত ছিল না। তা ছাড়া আমাদের সন্তানরা একসঙ্গে এত সবজি কখনো দেখেওনি। এই উৎসবের মাধ্যমে শিশুরা এতগুলো সবজি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এতে করে শিশুরা সবজি খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।
চাঁদপুর ল্যাবরেটরি স্কুলের উপাধ্যক্ষ মৃদুল কান্তি দাস, সহকারী শিক্ষক নাজনীন হোসাইন, নুসরাত জাহান জানান, বাংলাদেশে আর কোথাও এভাবে সবজি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে চাঁদপুরে আমরাই প্রথম সবজি উৎসবের আয়োজন করেছি। ব্যতিক্রমী সবজি উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। একসঙ্গে এত সবজি দেখে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের দেশীয় সবজি চিনতে এবং জানতে পেরেছে।
অধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি দাস আরও বলেন, সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। অথচ আমাদের শিশুরা দিনে দিনে চটকদার খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। তারা দেশীয় মাছ, সবজি, ফল খাওয়া থেকে সরে আসছে। অথচ দেশীয় এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ঔষধি গুণাগুণ থাকে। যা শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। তারা যেকোনো ধরনের বিদেশি খাবারকেই বেশি পুষ্টিকর মনে করে। কিন্তু দেশীয় শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ। আর এসব শাকসবজি বা তরকারি আমাদের একেবারেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বর্তমানে বেশিরভাগ সবজিই বছরের বারো মাস পাওয়া যায়। এসব দেশীয় সবজি হতে পারে আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টির এক অনন্য উৎস। মূলত এসব কারণেই শিক্ষার্থীদের সবজির প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য থেকে নিরুৎসাহিত করতে এ আয়োজন করা হয়েছে।