আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন বাবদ গত ২০ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা চাহিদার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। চাহিদার বিভাজন পর্যালোচনায় এ খাতে আগামী ছয় মাসের জন্য আরও আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়। সম্প্রতি জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ অর্থের চাহিদা অর্থ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এ সভায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহাম্মন তারিক জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারের সব নির্দেশ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, মোটরযান ও অন্যান্য মালামাল কেনার জন্য সংশোধিত বাজেটে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাতে ১ হাজার ২৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি আরও জানান, বিগত বছরের ন্যায় বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়যোগ্য কোডসমূহে অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ রাখা হলে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে যৌক্তিক ব্যয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহাদাত শিকদার জানান, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারের সব নির্দেশনা প্রতিপালন করে বাজেট এন্ট্রি সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাস্তব চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেতন-ভাতা নির্ধারণের পর ওই খাতে উদ্বৃত্ত অর্থ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে সমন্বয়পূর্বক বকেয়া বিল পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তিনি।
অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাহিদ সুলতানা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে উদ্বৃত্ত অর্থ অন্য কোনো খাতে সমন্বয় না করে অন্যান্য কোডে উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে সমন্বয়ের জন্য অনুরোধ জানান। তবে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারি বিভিন্ন বকেয়া যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে অর্থ স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে অর্থ বিভাগে পত্র পাঠানোর আহ্বান জানান
সভায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বকেয়া অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ওই খাতে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যবহারের নির্দেশনাটি শিথিল করে এ খাতে বরাদ্দ সমুদয় অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মপরিধি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন খাতে খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সময় থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ও মোটরযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত এ ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা নির্মাণ ও মোটরযান কেনার জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়েছে।
বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রায় ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাহিনীগুলোকে অর্থবছরের শুরুর পরিকল্পনার বাইরেও কিছু কর্মকা-ে অন্তর্ভুক্ত হতে হচ্ছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য, পোশাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেতার সরঞ্জাম, মোটরযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাসহ বিভিন্ন কাজ বাবদ এ বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৩০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়েছিল পুলিশ বিভাগ। এর মধ্যে জ্বালানি খাতে ৬০ কোটি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনায় ৪১৪ কোটি, খাদ্যদ্রব্য বাবদ ১০০ কোটি, পোশাক বাবদ ৯৮ কোটি, বেতার সরঞ্জাম বাবদ ১১৪ কোটি টাকা চেয়েছিল। আর নিরাপত্তাসামগ্রী বাবদ চেয়েছিল ৫০ কোটি টাকা।