রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
গত বছরের আগস্টের শুরুতে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এর আগে তিনি আগস্টের প্রথম দিকে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এই দাবি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্য হিন্দু জানতে পেরেছে- হাসিনা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন এবং সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য লকডাউন নিশ্চিত করেছিল যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।
এদিকে ভারতীয় এই পত্রিকায় একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘আমরা সেসময়ে গণভবনে উপস্থিত ছিলাম এবং ক্রমাগত এই পরিকল্পনাই করছিলাম যে, কীভাবে ছাত্র বিক্ষোভের সমাধান করা যায়। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেছিলেন (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সেই কারণেই লকডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’
নওফেল দাবি করেন, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা চীন সফরে যাওয়ার পর ঢাকার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সর্বাত্মক আন্দোলন তীব্র গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ছাত্ররা যখন, এক দফা দাবি-শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে তখন তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা।
পরে অবশ্য ছাত্রবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করলে সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং শেষ পর্যন্ত আত্মগোপনেই থাকেন। সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাবলি থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়।’
বাংলাদেশে গত ৫ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় অর্থনীতি ও শিল্পে অস্থিরতা বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন নওফেল। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন আনার কোনো এখতিয়ার নেই। বাংলাদেশের আদর্শিক গতিপথ নির্ধারণেরও এখতিয়ার নেই।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত বছরের আগস্টেই হাসিনাসহ তার মন্ত্রিসভার সকল মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়। এছাড়া গুম কাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্প্রতি মোট ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।