আমারদেশ২৪ ডেস্ক:
প্রকাশ সোমবার , ৭ এপ্রিল ২০২৫
নদীতে পানি থাকে, কিন্তু প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর ৩০ কিলোমিটার এলাকায় পানি নেই। আছে বালুচর। কোথাও কোথাও পানির ধারা আছে; তবে বেশিরভাগ এলাকায় নদীর তলদেশে এখন বালুচর। কোথাও আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। এই চিত্র ফটিকছড়ি উপজেলার।
ফটিকছড়ির ভূজপুর থেকে শুরু করে নাজিরহাট এলাকা পর্যন্ত হালদা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা এখন অনেকটা পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি সংকটের কারণ হচ্ছে রাবার ড্যাম, নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন, চা বাগানে পানি নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য সম্পদ। অন্যদিকে সেচের পানির জন্য নদীপাড়ের মানুষের মাঝে হাহাকার চলছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হালদা নদীর পানির ওপর শুধু সবজি নয়, কয়েকটি বিলের বোরো ধানের চাষাবাদও নির্ভরশীল। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর কয়েকটি শাখা খালও মরে যাচ্ছে। নদী ও শাখা খাল খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলারসমিতিরহাট, রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার কৃষক চরের প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল উৎপাদনে সেচের পানির জন্য হালদা নদীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কিন্তু গত এক দশকে হালদা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এখানে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি অনেকটাই অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুগের পর যুগ ধরে নদীপাড়ের চাষিরা নদীর বিভিন্ন চরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সবজির পাশাপাশি বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন। হালদার পানির ওপর নির্ভর করেসমিতিরহাট,
রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার কৃষকের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন–জীবিকা। অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের প্রতিটা দিন।
পাইন্দং গ্রামের বাসিন্দা মো. হাকিম বলেন, এক দশক আগেও নদীর গভীরতা ছিল। তখন নদীতে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ ছিল। নদীর পানি দিয়ে সবজি ও ধান চাষাবাদ করতেন স্থানীয় চাষিরা। বিশেষ করে নদীর চরে সবজি ও ধান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাড়ের অনেক চাষি।
সুয়াবিল গ্রামের তোফায়েল বলেন, হালদার চরে জমি আছে আমার। সেখানে শুধু সবজির চাষ হতো। নদীর পানিই ছিল চরের উর্বরা শক্তির মূল উৎস। তখন পানির অভাব ছিল না। ফলে চরে সবজি চাষ করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতাম। কিন্তু বর্তমানে পানি না থাকায় চরের জমিতে সবজির চাষ করা যাচ্ছে না।