নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

২০২৪ সাল পর্যন্ত বকেয়া ৭৭২২ কোটি টাকা এয়ারলাইন্সগুলোর বকেয়া বাড়ছে বেবিচকের কাছে।

আমার দেশ ২৪ ডেক্স।
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

দেশের বিমান সংস্থাগুলোর কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষের পাওনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বকেয়া রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশের কাছে। তাদের বকেয়ার পরিমাণ ৬ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এসব বকেয়া আদায়ে বারবার চিঠি দিলেও আদায় হচ্ছে যৎসামান্য। সময়মতো আদায় না হওয়ায় সারচার্জ বেড়ে বকেয়ার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। বেবিচকের মাসিক সমন্বয় সভাসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি বিমান সংস্থা কাজ করছে। সেগুলো হচ্ছে- জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা এয়ারলাইন্স। এ ছাড়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং জিএমজি এয়ারলাইন্স গত কয়েক বছরে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সভার তথ্য অনুযায়ী, ৭টি বিমান সংস্থার মধ্যে ৬টি বিমান সংস্থার কাছে এ টাকা পাবে বেবিচক। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি মালিকানাধীন পাঁচটি বিমান সংস্থার কাছে বেবিচকের পাওনা ১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সারচার্জের পরিমাণ ৯১৪ কোটি টাকা। বন্ধ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে পাওনা বকেয়া ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বেবিচকের মোট ৪০৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। মোট বকেয়ার মধ্যে বিমান সংস্থার মূল ঋণের পরিমাণ ১৪১ কোটি টাকা, বাকি ২৩৭ কোটি টাকা ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জের কারণে। ভ্যাট আয়কর হিসেবে এর ঋণ ২৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

বিলুপ্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের মোট পাওনা রয়েছে ৩৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জ ৩২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ভ্যাট এবং আয়কর হিসেবে রয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বিলুপ্ত জিএমজি এয়ারলাইন্সের মোট পাওনা ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মূল ঋণ ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জ ৩৩৮ কোটি টাকা, ভ্যাট এবং আয়কর হিসেবে রয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বেসরকারি মালিকানাধীন বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার সিএএবির কাছে মোট পাওনা রয়েছে ১৭২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ ১৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বাকি ৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জের কারণে। ভ্যাট এবং আয়কর হিসেবে রয়েছে ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের কাছে বেবিচক পায় মোট ২৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে মূল ঋণের পরিমাণ ২২ কোটি ৯ লাখ টাকা, বাকি ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ঋণের ওপর আরোপিত সারচার্জ, ভ্যাট হিসেবে তাদের ঋণ রয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। বেসরকারি মালিকানাধীন এয়ার অ্যাস্ট্রা এয়ারলাইন্সের কাছে সিএএবির কোনো পাওনা নেই।

সভাসূত্রে আরও জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বেবিচকের মোট পাওনা ৬ হাজার ৩২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বকেয়া ঋণের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মূল ঋণ মাত্র ৯১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাকি ৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা সারচার্জ, ভ্যাট এবং আয়কর বাবদ পাওনা। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য নিয়মিতভাবে বিমান সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ১৯টি নন-অ্যারোনটিক্যাল চুক্তি স্বাক্ষরেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটি কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করেই বেবিচকের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো বকেয়া পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই সারচার্জ কমিয়ে যুক্তিসঙ্গত সারচার্জ হার নির্ধারণের দাবি করে আসছে। তাদের অভিযোগ, ক্রমাগত সারচার্জ কমানোর দাবি করা হলেও বেবিচক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে সারচার্জ বেড়ে গিয়ে বকেয়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক হচ্ছে।

যদি কোনো বিমান সংস্থা সময়মতো বেবিচককে চার্জ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের প্রতি বছর অতিরিক্ত ৭২ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। বিভিন্ন বিমান সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, অনেক বিমান সংস্থা সারচার্জের কারণে তাদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না, এমনকি বিশাল ঋণের কারণে অনেকেই দেউলিয়াও হয়ে গেছে।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে সারচার্জের হার বার্ষিক ৮ থেকে ১০ শতাংশের বেশি নয়। আমরা ক্রমাগত যুক্তিসঙ্গত সারচার্জ হার নির্ধারণের দাবি করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কালক্ষেপণ করছে।

আরও পড়ুন