জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনও ঘোষণা হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেটাকে ধরে নিয়েই ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখন এলাকামুখী। নিজ নিজ আসনে পুরোদমে প্রচার-কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ইফতার মাহফিল ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসংযোগ করছেন তারা। নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী উল্লেখ করে ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নিজের অবস্থান পোক্ত করতে দলের নীতিনির্ধারকদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন কেউ কেউ। বিএনপির প্রার্থী হতে আগ্রহী নেতা ও তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
দলের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচমুখী দল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দলকে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের তাগিদ দিয়েছেন। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দলের ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি, ভবিষ্যৎ করণীয় ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ। যে নেতা যে এলাকায় কাজ করছেন তিনি সেখান থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এটা রাজনীতির একটা অংশ। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা আন্দোলন-সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে, শিক্ষিত তথা যারা যোগ্য তারা অগ্রাধিকার পাবেন। আগের মতো লবিংয়ে কাজ হবে না।
মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দল থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ ও জনবান্ধব নেতাদের মনোনয়নের আভাস দেওয়া হয়েছে। জনগণও ক্লিন ইমেজ ও জনবান্ধব নেতারা মনোনয়ন পাবেন এমনটা প্রত্যাশা করেন। দল কিংবা সংগঠনে তার নিজের এলাকায় যেমন শক্ত অবস্থান থাকতে হবে, পাশাপাশি জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। জনগণের কাছে একজন ভালো নেতা ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে হবে।
২০১৮ সালে মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পেতে জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, পুরোদমে প্রচার চলছে। প্রতিদিন ইফতার পার্টি হচ্ছে। এ আসনের মানুষ আমাকে পছন্দ করে। সবসময় দলের আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিলাম। হামলা হয়েছে, ২৭টা মামলা খেয়েছি। চাকরি হারিয়েছি। ২০১১ সালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ বেধড়কভাবে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। তখন ওয়াইডব্লিউসিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের চাকরিটা হারাই। দল আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও-পাগলা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাচ্চু। এ আসনে বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতা না থাকায় তাকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। পরে ঐক্যফ্রন্টের মোর্শেদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
আকতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই গফরগাঁও-পাগলা আসনে গণসংযোগ করছি। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ঢাকায় আর বাকিটা সময় এলাকায় থাকি। তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করে যাচ্ছি। রোজাকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিল ও জনসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। আন্দোলন-সংগ্রামে, জনগণের পাশে সুখ-দুখে সবসময় ছিলাম। ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনে গফরগাঁও-পাগলার মানুষ ধানের শীষকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।
গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানী (২) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি সরদার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গোটা জাতি এখন নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। আমিসহ আমার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের নিজেদের এলাকায় জনগণের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানেই যাচ্ছে জনগণ তাদের সাদরে গ্রহণ করছে। গোপালগঞ্জেও এর ব্যতিক্রম নেই। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানী ২ আসনের প্রায় প্রত্যেকটা গ্রামে আমি গিয়েছি সেখানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। সংগত কারণে এ আসনে আমি আমার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ঢাকার রাজপথে হামলা-মামলা, গুম-খুন, জেল-জুলুমকে উপেক্ষা করে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। আমি আশা ও প্রত্যাশা রাখি দল এবার ত্যাগী ও নিবেদিতদের মূল্যায়ন করবে এবং সেই মূল্যায়নের মিছিলে আমি অংশীদার হতে পারব।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন, যারা তরুণ এবং শিক্ষা-দীক্ষা সর্বোপরি যারা যোগ্য আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।