নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

চলতি মাসের শেষদিকে দেশে ফিরতে পারেন বেগম জিয়া।

আমারদেশ২৪ ডস্ক:
প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
যুক্তরাজ্যে ছেলের বাসায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি আগের চেয়ে বেশ ভালো আছেন। ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়াকে ফলোআপ করছেন নিয়মিত।

লন্ডন থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, আমি ২ দিন আগে লন্ডন এসেছি। ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। ওনার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তা শেষ হবে। আমরা চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা বাসায় এসে ম্যাডামের চিকিৎসার ফলোআপ করে যাচ্ছেন। তারা হয়তো আগামী সপ্তাহে পূর্ণাঙ্গ ছাড়পত্র দিতে পারেন। তাদের পরামর্শ অনুয়ায়ী দেশে ফেরার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের ইচ্ছা চলতি মাসের শেষদিকে ম্যাডাম দেশে ফিরতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের ফেরার সম্ভবনা নেই। তারেক রহমানের ফেরা নির্ভর করছে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর। আমি এবং ডা. জাহিদ ম্যাডামের সঙ্গে আছি। এ ছাড়া ম্যাডামের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গৃহপরিচারিকাও সঙ্গে আছেন। বাকি সফরসঙ্গীরা দেশে ফিরে গেছেন।

লন্ডনে থাকা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, এখানকার ডাক্তাররা যেসব পরীক্ষা করতে বলেছেন সেগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন; কত দ্রুত তিনি ছুটি দেওয়ার মতো অবস্থায় যেতে পারবেন।

জানা গেছে, লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’র বিখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা রোস্টার করে বাসায় দেখে যাচ্ছেন। বাসায় সবকিছুর চিকিৎসা চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ১৫ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে ইতিমধ্যে বেশিরভাগ দেশে ফিরে এসেছেন। বাকিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক গতকাল সময়ের আলোকে বলেন, মেডিকেল বোর্ড দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন। চূড়ান্ত চেকআপ চলছে। চিকিৎসকরা যখন ভালো মনে করবেন- তখনই সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২০ ও ২১ এপ্রিল ধরে একটা তারিখ মোটামুটি ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তাও চূড়ান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ওভারওল ভালো। তিনি ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চমৎকার একটা ঈদ কেটেছে। স্বাভাবিকভাবেই ওনি মনোবলের দিক থেকে সতেজ ও সুস্থ আছেন। বাকিটা চিকিৎসকরা করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার সময়ের আলোকে বলেন, আমি ঢাকায় আছি। এখনও তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করছে। তারা যখন চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেবেন তখনই সবকিছু বলা যাবে। তারিখ হলে লন্ডনে যেতে পারিÑম্যাডামকে আনার জন্য। তিনি বলেন, ম্যাডাম দ্য লন্ডন ক্লিনিকে সেরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। সেখানে বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন।

টানা ১৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে দ্য লন্ডন ক্লিনিক থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। গত ৭ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেসে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। হাসপাতালটির লিভার বিশেষজ্ঞ জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। ৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২ রক্তনালির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার। গত আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন