২৪ মে ১৮৯৯ সালে বর্ধমানের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম, যিনি দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য থেকে উঠে বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। মসজিদের মুয়াজ্জিন থেকে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী ও মানবতাবাদী চেতনার অগ্নিশিখায় পরিণত হন। তাঁর কবিতা ও গান আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা যোগায় এবং নারী স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্যের প্রতীক হয়ে আছে। নজরুলের চেতনা নতুন প্রজন্মের জন্য অবিরাম প্রেরণার উৎস।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষে তাদের ভালবাসা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের খবরে।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন শুরু হয়েছিল দুঃখ-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এক দরিদ্র মুয়াজ্জিন কীভাবে হয়ে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের ‘বিদ্রোহী’ কবি? কিশোর বয়সে মসজিদে আজান দেওয়া ছেলেটি কীভাবে জাতিকে জাগ্রত করা কবিতার স্রষ্টা হয়ে উঠলেন? তাঁর জীবনের সূচনালগ্নই যেন এক অমোঘ কবিতা।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতা ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাজারের খাদেম। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হন তিনি। সংসারের অভাবে দশ বছর বয়সে মক্তবে শিক্ষকতা, মুয়াজ্জিনের কাজ এবং মাজারের খাদেমের দায়িত্ব নিতে হয়।
এই ছেলেটিই লেটো দলে যোগ দিয়ে সাহিত্যচর্চার সূচনা করেন। শেখ চকোর ও বাসুদেবের মতো কবিদের সাহচর্যে তিনি গানে-কবিতায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। চাচা বজলে করিমের প্রভাবে আরবি, ফারসি ভাষায় আগ্রহ জন্মে। হাফিজ নুরুন্নবীর কাছে শিখেছিলেন ফারসি, নিবারণচন্দ্র ঘটকের সাহচর্যে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক চেতনা।
‘বল বীর – চির উন্নত মম শির’ – এই উচ্চারণের সাহস কোথা থেকে এলো? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নজরুল যুদ্ধের ভয়াবহতা অনুভব করেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁর কলমে সৃষ্টি করে ‘বিদ্রোহী’।
দারিদ্র্য, সংগ্রাম আর আত্মমর্যাদার এক অনন্য প্রতীক নজরুল। এক হাতে কোরআন, অন্য হাতে গীতা—তাঁর মতো সর্বজনীন চেতনার কবি আজও বিরল।
তানজিল কাজী
শিক্ষার্থী- ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে চুরুলিয়ায় জন্ম নেওয়া এই কবি শৈশবে দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, নাট্যকার, সাংবাদিক, সমাজ সংস্কারক ও মানবাধিকারের সৈনিক।
তার লেখায় ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্য ও মানবতার শক্ত বার্তা স্পষ্ট। বিদ্রোহের ভাষা যেমন ছিল তার কবিতায়, তেমনি ছিল প্রেম ও করুণার গভীরতা—‘ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি…’
তিনি নারী স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠে লিখেছেন—‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য কারাবরণও করেছেন তিনি। নজরুল ছিলেন এমন এক কণ্ঠস্বর, যিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা মনের এক অবিচ্ছেদ্য অস্তিত্ব।
তানজিলা সুলতানা
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ