নিউজ ডেস্ক:
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র্যানকন ভবনের সামনে ‘আলামিনের দোকান’ নামে পরিচিত একটি চা দোকানের সামনে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ তার বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাদের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের ২ ছাত্রী। তাদের একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু জর গিফারি ওরফে পিয়াসের প্রেমিকা। মোবাইল ফোনে প্রেমিকার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে আলামিনের দোকানের সামনে ছুটে আসেন পিয়াস। এক পর্যায়ে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। কারণ পিয়াস জুনিয়র হওয়ার পরেও পারভেজদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছিল। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাধান করে দেওয়ার পরেও তুষ্ট হতে পারেননি পিয়াস। পারভেজকে হত্যার পরিকল্পনা করে পিয়াস। সেটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ও এর বাইরের সহপাঠীদের নিয়ে পারভেজ ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা করে। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা যান পারভেজ। আর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বনানী থানা সূত্র জানায়, ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রীকে খুঁজছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ওই ২ ছাত্রীর মধ্যে একজন পিয়াসের প্রেমিকা। আর প্রথম যে ৩ জনের সঙ্গে পারভেজদের বাকবিতণ্ডা হয় সেখানেও ছিল পিয়াস। আসামিদের মধ্যে পিয়াস ছাড়াও আরও একজন প্রেমিক থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে ওই ছাত্রীদের খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামিরা গ্রেফতার হলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির। মামলার আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারি ওরফে পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। মামলার এজাহারে বলা হয়, তুষার ও হৃদয় রাজধানীর বনানীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। তারা পিয়াসের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ছিল বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধীদের দায়ী করল ছাত্রদল: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, পারভেজকে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জড়িত। তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে সংগঠনটি। অন্যদিকে রাকিবুলের এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেসবুক পেজে দেওয়া প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, একজন মৃত ব্যক্তির মরদেহের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্রদলের এমন ঘৃণ্য মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সোবহান নিয়াজ তুষার এবং হৃদয় মিয়াজী পারভেজ হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল বলেন, পারভেজের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড পেজ থেকে অশোভনীয় ভাষায় পোস্ট দেওয়া হয়েছে। বনানী থানায় দায়ের হওয়া মামলার তথ্য জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, মামলার বাকি আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ (তুষার), যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজী, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অন্য দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আবু জর গিফারি ও মাহাদী হাসান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।