শুক্রবার ০৪ এপ্রিল ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ঘোষণার পর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দুটি দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
কোভিড, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও একটি শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি নিজেদের সমৃদ্ধির প্রত্যাশা জিইয়ে রেখেছিল। তবে এসব ঝড়ঝাপটার পরে এবার এলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কের ঘোষণা। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্প শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। আর বাংলাদেশের ওপর আরোপ করেছেন ৩৭ শতাংশ শুল্ক। এত বেশি নতুন শুল্কের ধাক্কায় দেশ দুটির ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা তা প্রশমিত করতে চেষ্টা করছেন। উভয় দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের শঙ্কা, তারা হয়তো আর বড় উৎপাদনকারী শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবেন না। তাদের ক্রয়াদেশ কম শুল্কযুক্ত ও বড় শিল্প শক্তিসম্পন্ন দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।
শ্রীলঙ্কার জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের পরামর্শক তুলি কুরে বলেন, ‘আমাদের শোকবার্তা লিখতে হবে। ৪৪ শতাংশ কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের ধাক্কা বিশ্বের পোশাকশিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর জন্য অনেক বড়। ইক্যুইটি ফার্ম উইলিয়াম ব্লেয়ারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত তৈরি পোশাকের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করে, সেসব দেশের ওপর গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, পোশাক প্রস্তুতকারী দেশগুলোকে নিশানা করার মধ্য দিয়ে শুধু ওই সব দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না, এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর ওপরও চাপ তৈরি হবে। উইলিয়াম ব্লেয়ারের মতে, পণ্যের খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদেরই জন্যই সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাতে কাজ করেন ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই নারী। এ অঞ্চলে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী কর্মী রয়েছেন, সেগুলোর একটি বাংলাদেশ। এত বেশিসংখ্যক নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে।
গত বছর বড় ধরনের বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে বাংলাদেশের স্বৈরশাসকের পতন হয়। এর পর থেকে দেশটি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির জন্য তৈরি পোশাকশিল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ।