amardesh24
সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
‘বিয়ারিংয়ের ত্রুটি’র কারণে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির চাকা খুলে পড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে চাকা খুলে পড়ার এই কারণ তুলে ধরে সোমবার (১৯ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিমান।
তবে কী কারণে ‘বিয়ারিং ফেইলিওর’ হয়েছিল, সেটি তদন্তের পর জানা যাবে বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। চাকা খুলে পড়ার এই ঘটনায় নিরাপত্তা ও তদন্তে বিমান কর্তৃপক্ষ দুইটি কমিটি গঠন করেছে।
সময়ের আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফ্লাইট শুরুর আগে নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজ ইনস্পেকশন করা হয়। এটা রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়া উড়োহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে এই ল্যান্ডিং গিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। ল্যান্ডিং গিয়ারে থাকা গ্রিজ শুকিয়ে যাওয়া বা সেখানে থাকা বিয়ারিংয়ে সমস্যা দেখা যাওয়ার কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে। ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ল্যান্ডি গিয়ার ৬ মাস পরপর মেইনটেইন্যান্স করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
ঘটনা পর্যালোচনা করে বিমান কর্তৃক্ষ বলছে, কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানির তৈরি ড্যাশ-৮ ৪০০ মডেলের বিমানটির চাকার বিয়ারিং ত্রুটি দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট চাকা অথবা টায়ার ‘বিচ্যুত হতে পারে’, যা সেদিন ঘটেছে।
এরই মধ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারিগরি টিম পাঠানোর অনুরোধ করে বাংলাদেশ বিমান। তাতে সাড়া দিয়ে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের বিশেষায়িত দলটি ঢাকায় আসছে।
গত ১৬ মে কক্সবাজার থেকে দুপুর দেড়টার দিকে উড়তে শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘বিজি-৪৩৬’ ফ্লাইটটি। ওড়া শুরুর পরেই দেখা দেয় বিপত্তি; খুলে পড়ে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের পাশের একটি চাকা। ওই ফ্লাইটে ৭১ জন যাত্রী এবং দুইজন ক্রু ছিলেন।
ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ, যার প্রায় আট হাজার ঘণ্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট অফিসার জায়েদ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিমানের উড়োজাহাজটি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করার পর একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। কিন্তু বিষয়টি পাইলট বা কেউ টের পাননি। বিমানবন্দরে উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা আরেকটি উড়োজাহাজের পাইলট দেখতে পান যে, উড্ডয়ন করা উড়োজাহাজটি থেকে কী যেন পড়ছে। এটা দেখে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমকে বিষয়টি অবহিত করেন। এটিসি থেকে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহকে অবহিত করা হয়। তখন তারা বিষয়টি জানতে পারেন।
পাইলট ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তাৎক্ষণিক বিষয়টি জানান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারে। এরপর ফ্লাইটটি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, ইমার্জেন্সি প্রটোকলসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হয় রানওয়েতে।
এর মধ্যে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করে। উড়োজাহাজটি নির্দিষ্ট পার্কিং বে-তে পৌঁছানোর পর প্রকৌশলীরা বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা (2 নম্বর) না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে খুলে পড়া চাকাটি পাওয়া যায় কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায়। উড়োজাহাজটি ছিল কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানির তৈরি ড্যাশ-৮ ৪০০ মডেলের।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাকা খুলে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ছড়াও সতর্কতার বিষয়ে এবং উড়োজাহাজটি ফের ওড়ানোর জন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।