নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

ভারতে বসে হাসিনার অপতৎপরতায় বিপদে নেতাকর্মীরা।

আমার দেশ ২৪
বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মসূচি ও বক্তব্য দেওয়ার মতো অপতৎপরতায় বেকায়দায় পড়েছেন দেশে থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা। এতে সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। এতে সারা দেশব্যাপী দলীয় নেতাকর্মীরা আরও বিপদে পড়েন। এরই প্রেক্ষিতে সন্ধ্যার পর থেকেই ছাত্র-জনতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে জড়ো হন। দেওয়া হয় আগুন। ভাঙচুর চালানো হয় শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতে।
এদিকে বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শেখ হাসিনা ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে বুলড্রোজার মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ও ভিডিও দেন। ধানমন্ডির ৩২ অভিমুখে যান। সেখানে তারা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করেন।
অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যেসব অপকর্ম করেছে তার জাতির কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং তারা ঠিক করেছে বলেই আবার নতুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দিচ্ছেন। জনগণের পালস তিনি বোঝেননি। তার আমলে নির্বাচনগুলো যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এ কারণে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে।
তারা বলেন, গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনসহ একাধিক মামলা করা হয়েছে। চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তার প্রত্যর্পণের জন্য গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারাও শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন, তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা একের পর এক বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। এমনকি তিনি বিভিন্ন ফোরামে অনলাইনে বক্তব্য রেখে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের দলীয় ফেসবুক পেজে কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি। এছাড়া রয়েছে আজ ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ, ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে মশাল মিছিল এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিফলেট বিতরণের ভিডিও প্রকাশ করছে দলটি।
এতে করে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রিুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে আরও বিপদে ফেলছে দলীয় নেতাকর্মীদের। এরই মধ্যে বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ায় সারা দেশব্যাপী দলীয় নেতাকর্মীরা আরও বিপদে পড়েন।
এদিকে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দলের প্রধান নেতাকর্মীর বেশিরভাগই দেশের বাইরে আছেন, কেউ পলাতক রয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন নেতা একাধিক মামলায় আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। দলের অনেক নেতা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এখন আর দলের কোনো নেতৃত্ব বা কার্যক্রম স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। এমনকি ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন উচিত অহেতুক কর্মসূচি ঘোষণা না করে দেশবাসীর উদ্দেশে ক্ষমা চাওয়া। একই সঙ্গে তার আমলে যেসব অপকর্ম হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত সেগুলো খুঁজে বের করা। জনগণের জন্য কীভাবে কাজ করা যায় সেই চেষ্টা করা। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তিনি তার অপকর্মের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য ও কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দিয়ে মূলত তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বেকায়দায় ফেলছেন। তিনি আবার নতুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। তার অপকর্মের জন্য তিনি ক্ষমা চাননি। তার উচিত ছিল নেতাকর্মীদের দিক তাকিয়ে দলকে গোছানো। এরপর তার কর্মসূচি দেওয়া উচিত ছিল। তার অপকর্মের জন্যই তো তাকে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে। তার বক্তব্য ও কর্মসূচির জন্য ইতিমধ্যে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়েছেন।

আরও পড়ুন