আমার দেশ ২৪
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সময় বিকাল সাড়ে ৪টা। প্রবেশপথে বেশ কয়েকটি মাঝারি লাইন। পাঠক-দর্শনার্থীরা ঠেলাঠেলি করে মেলায় ঢুকছে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঘুরে দেখা যায় মোটামুটি ভিড়। তবে একাডেমি প্রাঙ্গণে ভিড় ছিল না বললেই চলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারি সারি বইয়ের স্টলগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল ফাঁকা। পাঠকরা ভিড় জমিয়েছিলেন বইমেলার বড়ড়ো স্টল আর প্যাভিলিয়নের চারপাশে। এরমধ্যে আবার স্টল-প্যাভিলিয়নের চেয়ে লেক পাড়েই দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল বেশি। প্রিয়জন আর পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন তারা। অনেকে বইয়ের স্টল আর প্যাভিলিয়নে গেলেও বই কেনার চেয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন বেশি।
বইমেলায় নতুন বই নিয়ে সবসময়ই একটু আলাদা উদ্দীপনা থাকে। এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন মিলে মেলায় নতুন বই এসে ছে মাত্র ৪৫টি। তবে প্রথমদিনে নতুন বইয়ের সংখ্যার হিসাব দেয়নি বাংলা একাডেমি। মেলা প্রাঙ্গণে এখনও সেভাবে লেখকদের দেখা মিলছে না। লেখক আর তার নতুন বইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে ভক্তকুল। লেখক-পাঠকের মিলন মেলার সঙ্গে বইমেলারও অপেক্ষা জমে ওঠার।
লেক পাড়ে কথা হয় রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) মূলত ঘুরতে এসেছি। কয়েকটি বই দেখেছি, তা পরে এসে কিনব। ছুটির দিনে হয়তো আসতে পারি। কারণ ছুটির দিনে লেখকদের হাত থেকে পছন্দের বইটি পাওয়ার সুযোগ হতে পারে। লেখকরা সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই বেশি আসেন।
- মেলায় বাতিঘর প্রকাশনীর সামনে গতকাল বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়। কাছে গিয়ে জানা গেল নান্দনিক ডিজাইনের কারণেই মূলত ভিড়। বই কিনতে নয়, ছবি তুলতেই ভিড় জমিয়েছেন তার। নিচ্ছিলেন। এখানে কথা হয় তুলি (ছদ্মনাম) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিকালের দিকে বইমেলায় এসেছি। শুধু বই কেনাই উদ্দেশ্য নয়, সঙ্গে ঘুরতেও এসেছি। বান্ধবীরা সঙ্গে এসেছে। বইমেলার উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের বেশ আনন্দ দেয়।
কথা প্রকাশে এবার সব মিলিয়ে একশত-এর মতো বই আসবে বলে জানা গেছে। চতুর্থ দিন পর্যন্ত কথা প্রকাশে অল্প সংখ্যক নতুন বই এসেছে। বাকিগুলো দ্রুতই আসবে। সাজিদুল ইসলাম নামে এখানকার এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে এবার একশত-এর মতো নতুন বই বের হচ্ছে। কিছু বই স্টলে এসেছে। বাকিগুলো দ্রুতই আসবে। সরস্বতী পূজার দিনে ভিড় একটু বেশি ছিল। আজ (গতকাল) একটু কম। মেলায় কেনাবেচা বেড়েছে। প্রথম দুইদিন কেনাবেচা একদম কম ছিল। আর কয়েকদিন গেলে মেলা জমে উঠবে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিন রনি বলেন, লেখকরা সাধারণত ছুটির দিনে আসেন। কয়েকদিন গেলে লেখকরা হয়তো বইমেলায় নিয়মিত আসবেন। অনেকে প্রিয় লেখকের হাত দিয়ে বই নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। জনপ্রিয় লেখকরা বইমেলায় এলেই বইমেলা জমজমাট হয়ে উঠবে।
পুথিনিলয় থেকে বিক্রয় প্রতিনিধি শিহাব সরকার বলেন, বইমেলার তৃতীয় দিনের তুলনায় চতুর্থ দিনে পাঠকদের ভিড় কম হয়েছে। বিক্রিও একটু কম। এখনও বইমেলা জমে ওঠেনি। তবে দ্রুতই জমে উঠবে। লেখকরা এখনও সেভাবে বইমেলায় আসা শুরু করেননি। লেখকদের ওপরেও বিক্রি নির্ভর করে। স্টলে লেখক এলে ভক্তদের আনাগোনা বাড়ে, সঙ্গে বিক্রিটাও ভালো হয়।
গতকাল মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ৪৭টি। প্রথমদিনের হিসাব ছাড়া চতুর্থ দিন পর্যন্ত মোট বই এলো ৯২টি।
মূলমঞ্চ : এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমুদিনী হাজং জুইলী তারা, তারালা জুই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশ নেন মতিলাল হাজং এবং পরাগ রিছিল। সভাপতিত্ব করেন আবু সাঈদ খান।
লেখক বলছি মঞ্চ : গতকাল লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান।
আজ বুধবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হোসেনউদ্দীন হোসেন’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমেদ মাওলা। আলোচনায় অংশ নেবেন শহীদ ইকবাল এবং আবুল ফজল। সভাপতিত্ব করবেন মঈনুল আহসান সাবের।