সুরুজ মিয়া কাজ করতেন একটি আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে। বেতন সর্বসাকুল্যে ১২ হাজার টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে চাকরি ছেড়ে দেন। দৈনিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নেন। ভাড়া পরিশোধের পর এখন তার দৈনিক আয় ৭০০-৮০০ টাকা।
এভাবে বেকার তরুণ, ছাত্র, স্বল্প বেতনে কাজ করা কর্মী, অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিক কিংবা আত্মগোপনে থাকা রাজনৈতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন রাস্তায় নেমে এসেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে। রাজধানীতে রিকশা চালানোর কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো। এমনকি নির্দ্বিধায় উঠে যাচ্ছে ফ্লাইওভারগুলোতেও। ফলে অবধারিতভাবেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের বন্ধে দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ২৫ শতাংশই সংঘটিত হয়েছে থ্রি হুইলার দ্বারা। অবৈধ এসব যানের দ্বারা সংঘটিত দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৯ জন। ত্রিচক্রযানের মধ্যে ছিল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন ও পাখিভ্যানের মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি যানগুলো। এবারের ঈদে ১১ দিনের বন্ধে ২৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ২৪৯ জন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের আরেকটি হিসাবে দেখানো হয়, দেশের সড়কগুলোতে সংঘটিত দুর্ঘটনার প্রাণহানির ঘটনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এসব অবৈধ ত্রিচক্র যান্ত্রিক যানবাহন। ওই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ মারা যায় এসব যানের কারণে। প্রথম অবস্থানে ছিল মোটরসাইকেল, ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে পেশাদার রিকশাচালকদের তুলনায় নব্য রিকশাচালকেদর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। কেউ বেশি রোজগারের আশায়, কেউ বিকল্প কিছু খুঁজে না পেয়ে। তবে আত্মগোপনে থাকতেই হঠাৎ রিকশাচালকের সংখ্যা বৃদ্ধির বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ছেলের নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন সোনা মিয়া। সবজি বিক্রির আয় দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতে পারলেও নেশাগ্রস্ত ছেলের দৈনিক ‘হাতখরচের’ নামে নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছেলেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দেন। ওই রিকশার আয় দিয়েই ছেলে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি তার ‘হাতখরচের’ টাকা জোগাড় করছে।
ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডিপিস) চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে লাইনম্যানের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন কায়সার। একটি দুর্ঘটনায় পা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার। এরপর অন্য কোনো কাজ না পেয়ে নেমে পড়েন ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে। কায়সার বলেন, ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও এখন রিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছি। যেহেতু ব্যাটারি অটোরিকশা তাই বসে বসেই চালানো যায়। রিকশা চালিয়ে যে আয় করতে পারছি অকেজো এক পা নিয়ে অন্য কোনো কাজ করাও সম্ভব না। জানালেন, শুধু তিনিই নন, এখন অনেক বাসাবাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্ররাও পার্টটাইম অটোরিকশা চালান।