নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

(ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গের হিমঘরে ৬ জন নয়, ৭জনের মরদেহ।

রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গের হিমঘরে ৬ জন নয়, ৭জনের মরদে পড়ে আছে এখনও। এর মধ্যে ছয়জন পুরুষ আর একজন নারী। এর মধ্যে গতকাল শনিবার রাতে একজনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। ছয় মাস ধরে মরদেহগুলো পড়ে থাকলেও পরিচয় শনাক্তের অভাবে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।
শুধু ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। আর দীর্ঘদিন হিমঘরে থাকায় বিকৃত হয়ে গেছে মরদেহগুলো। তাদের আঙুলের ছাপ বা কোনো ছবি তোলা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বজন হারানো কেউ না কেউ এসে মরদেহগুলো দেখছেন। কিন্তু বিকৃত হয়ে যাওয়ায় কেউ এখন পর্যন্ত তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। একজন বয়োবৃদ্ধ  কান্নাকাটি করেন। তার ছেলের মরদেহ এখনও খুঁজে পাচ্ছেন না বলে মর্গের লোকদের জানিয়েছেন। ডিএনএ পরীক্ষা না করে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও চিকিৎসকরা
তবে চিকিৎসকরা জানান, আঙুলের ছাপ বা ছবি থাকলে মরদেহগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হতো। মরদেহগুলো দীর্ঘদিন হিমঘরে থাকার কারণে বিকৃত হয়ে গেছে এবং আঙুলের ছাপ মুছে গেছে। তাই ডিএনএ পরীক্ষা করা ছাড়া কোনোভাবেই মরদেহগুলো শনাক্ত করা নয়।
ঢামেক মর্গ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকেই হাসপাতালে মরদেহগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। মরদেহগুলো এসেছে ৬ আগস্ট থেকে ২২ আগস্টের মধ্যে। এর মধ্যে ময়নাতদন্তে পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে ‘আঘাতজনিত মৃত্যু’।
মরদেহের ময়নাতদন্তে একজনের মৃত্যু লেখা রয়েছে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে এবং খাতায় লেখা এনামুল নামের মৃত্যুর কারণ ‘ওপর থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু’। তবে এ এনামুল নিহতের নাম নাকি হাসাপাতালে যিনি নিয়ে এসেছেন তার নাম, সে ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। আর কোনো তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশ। কয়েকজনের মরদেহের বিষয়ে হাসপাতালে এন্ট্রি খাতায় বাহকের নাম হিসেবে দেওয়া হয়েছে পুলিশের মোবাইল নম্বর। আর সেসব মোবাইলে কল করা হলে পুলিশ ফোন ধরছে; কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানান, মহদেহগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। মরদেহগুলোর ডিএনএ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছিল কি না সেই তথ্য তাদের জানা নেই। সেটি পুলিশ ভালো বলতে পারবে। কারণ মরদেহগুলোর দায়দায়িত্ব এখন পুলিশের। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ছবি থাকলে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হতো। এখন যেহেতু অনেক দেরি হয়ে গেছে সে জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব নয়।
পুলিশ বলছে, মরদেহগুলোর খোঁজে অনেকেই আসছেন। তাদের ডিএনএ নেওয়া হচ্ছে। আর কেউ শনাক্ত করেন কি না তা দেখার জন্য বেওয়ারিশ মরদেহগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দেওয়া হয়নি।গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সদস্যরা ৬ বেওয়ারিশ মরদেহের তথ্য জানিয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা মরদেহগুলো হলো পুরুষ (২০), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২৫), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২২), অজ্ঞাতনামা নারী (৩২), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (৩০) ও এনামুল (২৫)।
খাতায় আরেকজনের ব্যাপারে লেখা আছে কল্যাণপুর থেকে এসেছেন, বয়স ৩৫। তবে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মরদেহগুলো মর্গে এসেছে আগস্টের ১৭ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে। এর মধ্যে ১৭ আগস্ট দুজনের, ১৯ আগস্ট তিনজনের এবং ২২ আগস্ট দুজনের।
ঢামেক মর্গের ডোম (ইনচার্জ) রামু দাস সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের এখানে সাতজনের মরদেহ আছে। এর মধ্যে ছয়জনের মরদেহ এসেছে শাহবাগ থানা থেকে এবং একজনের মহরদেহ যাত্রাবাড়ীর থানা থেকে। তিনি বলেন, মরদেহগুলো শনাক্ত করতে প্রায় প্রতিদিন  দুয়েকজন আসেন। এর মধ্যে একজন বয়স্ক মানুষ প্রায় সময়ই আসেন। কিন্তু মরদেহগুলো বিকৃত হয়ে যাওয়ায় কেউ চিনতে পারছে না এবং শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। একজনের নাম এনামুল পাওয়া গেলেও কোনো স্বজন পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন