দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। এখনও অনেক অভিভাবক আছেন, সন্তান কীসে পড়ে, কেমন পড়ছে, তার বিস্তারিত জানেন না। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে শিক্ষার্থীর নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ করে দেয়। এটি গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই পরে পরীক্ষা দেয় না। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছে ফরম পূরণের পর দেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তখন পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে। কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণেও পরীক্ষা দেয় না।
শুধু প্রথম দিনেই নয়, এর আগে দেখা গেছে, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও কিছু কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। প্রতি বছরই দেখা যায় ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে (এবার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ) পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। সাধারণ নিয়ম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩০ জন। এর মধ্যে ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। অনুপস্থিত ছিল প্রায় ১৪ হাজার ৭৩৮ জন পরীক্ষার্থী। বহিষ্কার হয়েছে ১০ জন পরীক্ষার্থী। সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৪৯৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ঢাকা বোর্ডে। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১ হাজার ৬২২, কুমিল্লা বোর্ডে ২ হাজার ৫৫৩, যশোর বোর্ডে ১ হাজার ৮০০, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ হাজার ১৭৩ জন, সিলেট বোর্ডে ১ হাজার ১৭৩, বরিশাল বোর্ডে ১ হাজার ৩৩, দিনাজপুর বোর্ডে ১ হাজার ৩৪১, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮৪২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থী ৯ হাজার ৬২৩ জন। এ বোর্ডেও দাখিল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ১০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারিগরি বোর্ডে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৯ জন। উপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এ বোর্ডে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসির প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলে কুরআন মজিদ ও তাজবিদ বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনালে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা পরীক্ষাকেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। সকালে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, সরকার সচেতনভাবে কাজ করায় এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এখনও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। এবারের এসএসসি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে। পরীক্ষার পরিবেশ ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান উপদেষ্টা। শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, গুজব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয়। সরকার সচেতনভাবে কাজ করায় এবার এখনও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। সামনের দিনগুলোয়ও এ বিষয়ে সাংবাদিক, অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১৩ মে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে এ পরীক্ষা। তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে। পরীক্ষা চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকছে। আর কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন এমন কেউ চলাচল করতে পারছে না। কেন্দ্রের আশপাশে সব ফটোকপি মেশিন বন্ধ থাকছে। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।