নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি কি চিরতরে শেষ হতে যাচ্ছে।

আমারদেশ২৪ ডেস্ক:
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরে আগস্টে পতন হয় ১৭ বছর স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। ওই সময় থেকেই কার্যত মাঠের রাজনীতিতে নেই প্রায় ৭০ বছরের পুরনো দলটি। সম্প্রতি জনদাবি ও রাজনৈতিক অধিকাংশ দলের আন্দোলনের মুখে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা কি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা আরও কঠিন করে তুলবে, কী হতে পারে দলটির রাজনৈতিক পরিণতি?
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে বিবিসি বাংলা। সময়ের আলোর পাঠকদের জন্য বিবিসির প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান আরও বাড়ানো হতে পারে। তখন দলটির গোপন তৎপরতার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২০২৪ সালের ৫ই অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই কাগজে-কলমে না হলেও কার্যত নিষিদ্ধ ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। সারাদেশে থাকা দলের পদ পদবী নেতাদের এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করতে দেখা গেছে। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বহু নেতাকর্মী পলাতক। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ যখন মাঠের কার্যক্রমে অনুপস্থিত সেই সময়ে আন্দোলন ও দাবির মুখে সরকার নির্বাহী আদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে—যা বহাল থাকবে ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে আওয়ামী লীগ বাড়তি চাপের মুখে পড়লো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সাইবার স্পেসেও দলটির কার্যক্রম থাকবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রকাশনা প্রচার বন্ধ হবে, শাস্তির বিধানও করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

কিন্তু এরকম নিষেধাজ্ঞা সাময়িক একটা বাধা তৈরি করলেও গোপনে আরো বেশি তৎপরতা বাড়তে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সামিনা লুৎফা।

তার কথায়, যখনই কাউকে নিষিদ্ধ করা হয়, তখন তো তার সারভাইবালটা থ্রেটের মধ্যে পড়ে। মানুষের যখন সারভাইভ্যাল থ্রেটের মধ্যে পড়ে, তখন মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে সারভাইভ করার জন্য। এবং সেটার জন্য যা কিছু দরকার খড়কুটো পেলে সে খড়কুটো আকড়ে ধরে। তখন ঐক্য দৃঢ়তর হয়, সংহতি বাড়ে।

একারণে সমাজে যেকোনো কিছু নিষিদ্ধ করলেই সাধারণত সমাজবিজ্ঞানীরা আমরা মনে করি এটা একটা ভুল স্টেপ। কারণ যখনই আপনি ওটা বন্ধ করবেন তখনই ওটা বাড়বে। তলে তলে বাড়বে। কিন্তু আপনি নিজে টের পাবেন না। কারণ ওরা তো বাইরে কাজটা করতে পারছে না। আর যখনই কেউ বাইরে কাজটা করতে পারে না তার মানে তো এটা না যে তারা এগজিস্ট করে না। বাংলাদেশ ভর্তি এত লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে?- বলেন সামিনা লুৎফা।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আওয়ামী লীগ নিজেকে ভিকটিম হিসেবে দেশ বিদেশে প্রচার করবে এবং কিছুটা সহানুভূতি আদায় করতেও সক্ষম হতে পারে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী। তার ভাষায়, নির্বাহী আদেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহানুভূতি আদায়ে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে।

এটাই কিন্তু তাদের মূল গেইম যে, তাদের মেটিক্যুলাস প্ল্যানে ষড়যন্ত্র করে উৎখাত করা হয়েছে, পুলিশ খুন করা হয়েছে। এই দুটো প্রসঙ্গ তারা বার বার আনেন এবং সেখানে সেই প্রসঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হলো। আর এখন যেটা ঘটবে- আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে যে এইভাবে একটা ডিউ প্রসেসের মধ্যে দিয়ে না এসে, ডেমোক্রেসির পথে যাওয়ার জন্য যে ট্রানজিশনাল জাস্টিসের প্রক্রিয়াগুলো আছে, সেগুলোর পথে না গিয়ে, ট্রুথ ও রিকনসিলিয়েশনের দিকে না গিয়ে আমরা যে ওদেরকে বন্ধ করে দিলাম এটার তো একটা ইমপ্যাক্ট হবে না?- বলেন তিনি।

সামিনা লুৎফা বলেন, কোনো কিছুকে নিষিদ্ধ করা হলে তলে তলে গ্রোথটাকে বন্ধ করা যায় না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেই মানুষ সেটা নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেই মানুষ সেটা নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে না বরং সেটা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক থাকে।

তিনি মনে করেন, যে প্রক্রিয়ায় এবং যেভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বরং ফিরে আসার পথ সহজ করবে।

জুলাই আন্দোলন মোকাবিলায় সহিংস অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনকালে গুম, খুন ও দমন-পীড়নের অভিযোগে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইতিহাস বলে, অতীতেও নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, এবার আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য নির্ধারক হবে দুইটি বিষয়—এক, নেতৃত্ব দিয়ে দলটি কী করতে পারে, এবং দুই, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকার ব্যর্থ হলে সুযোগ তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে কামব্যাক করতে হলে তাকে তো তার একটা পটভূমি তৈরি করতে হবে। এখন যে সরকার আছে বা যে সরকার আসবে তারা যদি জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়, সে সুযোগটা আবার আওয়ামী লীগ নিয়ে নেবে। নিষিদ্ধ করলেই যে কামব্যাক করতে পারবে না, এমন কোনো কথা নাই। জামায়াত তার জীবনে চারবার নিষিদ্ধ হয়েছে, জামায়াত তো আছে।

আরও পড়ুন