আমারদেশ২৪ ডেস্ক:
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাস-৮ উড়োজাহাজের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। পাইলটের প্রথম চেষ্টাতেই শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। এতে নিশ্চিত বড় রকমের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় উড়োজাহাজাটি। এ ঘটনার পেছনে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গাফিলতি দেখছেন অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিমানের উড়োজাহাজটি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করার পর একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। কিন্তু বিষয়টি পাইলট বা কেউ টের পাননি। বিমানবন্দরে উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা আরেকটি উড়োজাহাজের পাইলট দেখতে পান যে, উড্ডয়ন করা উড়োজাহাজটি থেকে কী যেন পড়ছে। এটা দেখে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমকে বিষয়টি অবহিত করেন। এটিসি থেকে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহকে অবহিত করা হয়। তখন তারা বিষয়টি জানতে পারেন। ফ্লাইটটি দিনের বেলা হওয়ায় এবং আরেক পাইলট দেখে ফেলায় ঘটনাটি ধরা পড়েছে। ফ্লাইট রাতের বেলা হলে বা কেউ না দেখলে ওই অবস্থায় উড়োজাহাজ অবতরণ করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। বিষয়টি জানার পর পাইলট ডান সাইডে প্রেশার দিয়ে এবং ইমার্জেন্সি সহায়তা নিয়ে নিরাপদে উড়োজাহাজটি অবরতণ করাতে সক্ষম হন। চাকা যে খুলে পড়েছে তা ফ্লাইটের কেউ যে সঙ্গে সঙ্গে টের পাননি তা ওই ফ্লাইটের সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চাকা খুলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ফ্লাইট শুরুর আগে নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজ ইনস্পেকশন করা হয়। এটা রুটিন ওয়ার্ক। এ ছাড়াও উড়োহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে এই ল্যান্ডিং গিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে ল্যান্ডিং গিয়ারে থাকা গ্রিজ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ল্যান্ডিং গিয়ার ৬ মাস পরপর মেইনটেনেন্স করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা ল্যান্ডিং গিয়ার কতগুলো ফ্লাইট ল্যান্ডিং এবং উড্ডয়ন করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করা আছে। এরপর গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়। এ ছাড়া নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। প্রতিটি উড়োজাহাজ ফ্লাই করার আগে ইনস্পেকশন করা হয়। ইনস্পেকশন করেন একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। এই উড়োহাজাটিও উড্ডয়নের আগে ইনস্পেকশন করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এত সহজেই এটি খুলে পড়ার কথা না। এই ঘটনার পেছনে সেই ইঞ্জিনিয়ার এবং বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের দায় রয়েছে।
তথ্যানুযায়ী উড়োজাহাজটি একই দিন সিলেট রুটেও চলাচল করে। কক্সবাজার-ঢাকা রুটে চলাচল করার আগে উড়োজাহাজটির মেইনটেনেন্স লগ বইতে ইনস্পেকশন করে ‘সব হুইল কন্ডিশন এবং সিকিউরিটি সেটিসফেকটরি’ লেখা হয়েছে। উড়োজাহাজটি মোট ৯ হাজার ৭৬৮ বার ল্যান্ডিং করেছে।