নোটিশ: বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় সাইটটি শীঘ্রই সাসপেন্ড হয়ে যাবে, অনুগ্রহ পূর্বক যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যের ডাক নাগরিক সমাজের।

নিজস্ব প্রতিবেদক চটগ্রাম।

বুধবার ১৮ জুন ২০২৫

ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম টার্গেট: দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যের ডাক নাগরিক সমাজের।

চট্টগ্রাম, ১৮ জুন — চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বহুমাত্রিক ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। “চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ইকোনোমিক্যাল জোনে ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমি বাতিলের দাবিতে” সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের আয়োজনে এক নাগরিক সভা বুধবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকট, বিদেশি প্রভাব, উপজাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা, এনজিও-আবরণে বৈদেশিক অনুপ্রবেশ ও অর্থায়ন, খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের গোপন পরিকল্পনা, এবং জিও-স্ট্র্যাটেজিক স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক আগ্রহকে ঘিরে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাস ভুলে যাওয়া জাতি। পলাশী যুদ্ধ থেকে শুরু করে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা—সব ভুলে গেছি। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণ আদায় করছে, চাঁদাবাজি করছে, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এই সংকটের সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুশীল সমাজ এবং তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।”
সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান মজিব। তিনি বলেন, “ভারত দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে এক নতুন পক্সি যুদ্ধের ছক কষা হচ্ছে। তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, সশস্ত্র মহড়া, গোপন বৈঠকের মাধ্যমে পাহাড়ে ভয়-ভীতি ছড়াচ্ছে। এমনকি আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীও এই ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পাহাড়ে স্বশাসিত অঞ্চল বা ‘জুম্মল্যান্ড’ রাষ্ট্র গঠনের প্রচারণা নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিদেশি সাহায্য ও এনজিওর মাধ্যমে তারা অর্থ ও অস্ত্র পাচ্ছে—যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোঃ বরকত আলী বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে এক ভয়ানক সামাজিক-ধর্মীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ইউএনডিপি ও ইউনিসেফের সহায়তায় কিছু পাহাড়িদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তর করা হচ্ছে। এই ধর্মান্তরের পেছনে রয়েছে জুম্মল্যান্ড নামে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। আরেকদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক কামাল পারভেজ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফাহিম শরীফ খান এবং জনসংহতি আন্দোলনের সংগঠক মাওলানা মোহাম্মদ সোহায়েল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা এডভোকেট পারভেজ তালুকদার এবং সঞ্চালনা করেন প্রভাষক এম. শাজাহান সাজু।
নাগরিক সভায় বক্তারা একক কণ্ঠে বলেন, “চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভয়ানক ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য ও জনসচেতনতা অপরিহার্য। রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং তরুণ সমাজকে এখনই সোচ্চার হতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের বাস্তবতা আজ কেবল সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নয়, বরং গোটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য এক স্পষ্ট হুমকি। নাগরিক সমাজের এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে পারে যে, সময় থাকতে না জাগলে হয়তো আর জাগবার সময় পাওয়া যাবে না। এই সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য এবং জোরালো কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

 

আরও পড়ুন