আমারদেশ২৪ নিউজ।
শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
একের পর এক যুদ্ধের দামামা, জাতিগত নিধন, বর্ণবাদী নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বেশকিছু কারণে বিশ্বে হু হু করে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি ভয়াবহ রূপ নেওয়া ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা, ইউক্রেন-রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে। একই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ানো, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধসহ বিভিন্ন সংঘাতে অস্থিতিশীলতা থেকে বাঁচতে মানুষ নিজের সহায় সম্বল ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরকম উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দানকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে এ দেশে কয়েক লাখ বিহারি ও রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। এর মধ্যে ১৩ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী। যাদের প্রত্যাবাসনে কোনো আশার খবর দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কেউ। উল্টো দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছেন তারা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনেকটাই অন্ধকারে চলে গেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বে নতুন করে শরণার্থী বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কায় রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমার শঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও এখনও জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশন ও ১৯৬৭ সালের শরণার্থীবিষয়ক প্রটোকলে সই করেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কনভেনশন ও প্রটোকলে সই না করায় শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করা বাংলাদেশের জন্য দুরূহ। কেননা শরণার্থীদের প্রশ্নে দেশে কোনো নির্দিষ্ট আইন এখনও তৈরি করা হয়নি। এর ফলে বর্তমানে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ, তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন এবং সন্তানদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব নয়। যদিও শরণার্থীদের আইন ও অধিকারের প্রশ্নে বিশেষ আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হলেও পরে সেটি খারিজ করে দেন আদালত। তবে বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ সনদগুলোতে সই এবং শরণার্থীদের দেশীয় আইনের কাঠামোতে আনা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।